অবরোধে অবরুদ্ধ জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ৪:০০:৪১ অপরাহ্ন
প্রথম দিনে ৩ মৃত্যু, সংঘর্ষ, গুলি
জালালাবাদ রিপোর্ট : প্রায় আট বছর পর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন প্রাণহানী, পুলিশের গুলি ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। অন্যদিকে, সড়ক মহাসড়কে যান চলাচল ছিলো খুবই কম। এতে অবরোধের প্রথম দিন একপ্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় কাটিয়েছেন সাধারণ মানুষ।অবরোধ চলাকালে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সিলেটে যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকার মিরপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এবং বগুড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের গুলিতে অসংখ্য আহত হয়েছেন। এসব সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অবরোধ চলাকালে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি, ছিল না কোন যানজটও। একই চিত্র সিলেটে। দেশের অন্য এলাকায়ও ছিলো অভিন্ন চিত্র। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় ছোট যান ওসীমিত সংখ্যক মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল লক্ষ্যনীয়ভাবে কম।মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটের কদমতলী, ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো খোলা ছিলো।অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা। নাটোরে নাকি মাইকিং করেও যাত্রী পাওয়া যায়নি।নৌ-পরিবহনের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। বিবিসি সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সদরঘাটে অধিকাংশই লঞ্চই ছিল নোঙর করা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবরোধের প্রথমদিন সকালে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের অধিকাংশ লঞ্চই ঢাকা ছেড়ে যায়নি। যাত্রী না থাকায় লঞ্চ ছাড়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে অবরোধের মধ্যে রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। সিলেট থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে ট্রেন। যদিও স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে।অবরোধ চলাকালে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের মিছিল ও পিকেটিং দেখা গেছে। ঢাকা-সিলেটসহ সব জায়গায় তাদের তৎপরতা ছিলো লক্ষ্যনীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা ছিলেন সক্রিয়। জামায়াতের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে জামায়াত ইসলামী সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে।
অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে চেকপোস্টে মোটর সাইকেল, গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের ব্যাগে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলের টহল চোখে পড়েছে। ছিলো বিজিবিরও টহল।এদিকে, অবরোধ চলাকালে ঢাকা, সিলেটসহ বিবিন্ন বড় নগরগুলোতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করেছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের বিএনপি এবং হরতাল-অবরোধ বিরোধী স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এসময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠি-সোটা দেখা গেছে।
এদিকে সংবাদমাধ্যম সূত্র বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি-জামায়াত। আর তাই শনিবার মহাসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে রোববার হরতালের এক দিন পরেই সারা দেশে তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। এরপর পরিস্থিতি বুঝে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা চলছে বিরোধী দলগুলোতে।এ অবস্থায় গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের সংঘাতের জায়গা নেই। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রশমন এবং একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপে বসবে।