ভোগান্তি-প্রাণহানীর ৭২ ঘন্টা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ৪:২২:৫৭ অপরাহ্ন
ফের ৪৮ ঘন্টার অবরোধের ডাক বিএনপি-জামায়াতের
জালালাবাদ রিপোর্ট : শেষ হলো ভোগান্তি, প্রাণহানী ও সংঘাতমুখর অবরোধের ৭২ ঘন্টা। তবে শেষ হয়েও হচ্ছেনা শেষ। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে। যে অবরোধ চলবে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে এই অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দেশজুড়ে এই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। একই সময় সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছে গণতন্ত্র মঞ্চও। সংহতি প্রকাশ করেছেন এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল অব. অলি আহমদ বীর বিক্রম।
ওদিকে, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চরণের মতোই অবস্থা যেন বাংলাদেশের রাজনীতির। নির্বাচনের ক্ষণ গননা শুরু হলেও সরকারের অনমনীয় অবস্থানের কারণে ফিরলো না কাঙ্খিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শুরু হয়ে গেলো অবরোধের মতো আন্দোলনের অস্থির কর্মসূচি। এতে যেমন অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে দেশ, তেমনি স্থবির হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা।
বিএনপি-জামায়াতের তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিনটিও প্রায় স্থবির ছিলো গোটা দেশ। শেষ দিনেও গণপরিবহন চলেনি বললেই চলে। দূরপাল্লার বাস চলেনি একেবারেই। বাসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ফলে ভোগান্তি দিয়েই সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস পার করেছেন মানুষ। যদিও আগের দুই দিনের তুলনায় সিলেট নগরের মধ্যে যান চলাচল কিছু বাড়তি দেখা যায়।
তবে অবরোধ শেষের কিছুক্ষণ আগে অর্থাৎ গোধূলী বেলায় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। এসময় টিকিট বিক্রির কাউন্টার খুলেন বাস কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বাস ও গন্তব্যের নাম বলে যাত্রীদের ডাকাডাকি করেন বাস চালকের সহকারীরাও।
পরিবহনকর্মীরা জানালেন, অবরোধের কারণে তিন দিন ধরে স্তব্ধ বাস টার্মিনাল। এখন অবরোধ শেষে সবাই যাত্রীর অপেক্ষায় আছে।
সন্ধ্যা ৬টায় একটি বাসের সুপারভাইজার জানান, কিছু যাত্রী উঠে বসে আছেন। তাদের বলা হয়েছে, সব আসন পূর্ণ হলে বাস ছাড়বে। কেউ কেউ নাশকতার ভয়ে বাস চালাতে চাইছেন না। অনেক পরিবহন আবার যাত্রীর অভাবে যেতে পারছে না।
এদিকে, অবরোধের শেষ দিনেও রেল স্টেশনে ছিলো দারুণ ব্যস্ততা। যেহেতু দূরপাল্লার বাস চলছে না তাই ট্রেনেই যাতায়াত করছেন অনেকে। ট্রেনগুলো ছাড়ছে সময়মত। কিন্তু টিকিট যেন সেনার হরিণ। তবে বাড়তি অর্থ দিলে পাওয়া যায় টিকিট।
বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় রেল স্টেশনে অনেক যাত্রী লাইনে দাঁিড়য়ে। কাউন্টারে বলা হচ্ছে সিট নেই, টিকিট নেই। কিন্তু প্রবেশপথে ঢুকলেই প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি নিয়ে টিকিট দিচ্ছেন রেলওয়ের কর্মীরা। এমন অভিযোগ যাত্রীদের।
অবরোধের শেষ দিনেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিলো খোলা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। শপিং মল কিংবা বড় ধরণের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ছিলো প্রায় তালাবদ্ধ। নগরে মানুষের আনাগোনা না থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারেও ক্রেতাদের জন্য হাহাকার দেখা যায়।
অবরোধ চলাকালে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিলো লক্ষ্যণীয়। তবে অবরোধ আহবানকারীদের চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শোডাউন ছিলো চোখে পড়ার মতো। গতকাল শেষ দিনেও সিলেট নগরে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র মহড়া দিতে দেখা যায়। এসময় পথচারীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কও লক্ষ্য করা যায়। তবে ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনিকে কোন প্রকার বাধা দিতে দেখা যায়নি। এমন দৃশ্য দেখে বেরসিক পথচারীদের কেউ কেউ বলেন, ‘এ যেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে’ দায়িত্ব পালন! যদিও অস্ত্র নিয়ে মহড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।