জগন্নাথপুরে বর্শি দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ৮:২৩:১৭ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এক শ্রেণির দরিদ্র পরিবারের মানুষজন বর্শি দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনও আছেন। তারা নারী-পুরুষ মিলে ছোট নৌকাযোগে নদী ও খালে গিয়ে বর্শি দিয়ে মাছ ধরেন। দিন শেষে এসব মাছ হাট-বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্যান্য খরচ করেন। এভাবেই দরিদ্র পরিবারের কিছু জীবন সংগ্রামী মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
শনিবার পৌর শহরের নলজুর নদীতে ছোট ছোট নৌকাতে বসে প্রখর রোদে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। ছোট চিংড়ির টোপ দিয়ে তারা টেংরা, পুটি সহ অন্যান্য ছোট মাছ ধরেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তারা এভাবেই একটি একটি করে মাছ ধরে নৌকায় থাকা পানিতে রেখে জীবিত রাখেন। দিন শেষে তাদের ধরা সব মাছ একত্রিত করে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে জনপ্রতি ৫ থেকে ৬শ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে কোন রকমে চলে তাদের সংসার। শুধু নলজুর নদীই নয়, বাদাউড়া নদী সহ উপজেলার অন্যান্য নদী ও খাল-বিলে এভাবেই এক শ্রেণির দরিদ্র পরিবারের মানুষ বর্শি দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাদাউড়া নদীতে বর্শি দিয়ে মাছ ধরাকালে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। সারা দিনে যা পাই, তা বিক্রি করে ৫ থেকে ৬শ টাকা আয় হয়। এ সামান্য উপার্জন দিয়ে অনেক সময় সংসার চলে না। যে কারণে অনেক সময় আমরা নারী-পুরুষ মিলে মাছ ধরি। তাদের মধ্যে অনেকে নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে ১ থেকে ২শ টাকা রোজগার করলে সংসার চলতো। এখন ৫ থেকে ৬শ টাকায়ও চলে না। আমাদের মাছ কিনতে হয় না। যে কারণে কোন রকমে চলতে পারছি। আবার অন্যন্য নদীতে নারী-পুরুষের সাথে শিশুরাও বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। এটি হচ্ছে, এক শ্রেণির দরিদ্র পরিবারের মানুষের মৌসুমি রোজগার। সব সময় নদীতে মাছ ধরা যায় না। শুধু হেমন্ত মৌসুমের কয়েক মাস বর্শি দিয়ে মাছ ধরতে মৌসুমি শিকারিদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। সেই সাথে দিন ও রাতের বেলায় আরেক শ্রেণির সৌখিন শিকারিরা বোয়াল মাছ ধরতে বর্শি ছাড়েন গভীর পানিতে। এতে পুটি মাছ পচিঁয়ে বোয়াল মাছের টোপ দেয়া হয়। ভাগ্য ভালো হলে ছোট-বড় বোয়াল ধরা পড়ে। আবার অনেক সময় শুণ্য হাতে ফিরতে হয় শিকারিদের। এখানেও কিছু দরিদ্র শিকারি আছেন। যারা বর্শি দিয়ে বোয়াল মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেক সময় শিকারিদের মাছ ধরার কলা-কৌশল দেখতে নদীপারে ভিড় জমান উৎসুক জনতা। এ যেন গ্রাম বাংলার নিত্যদিনের দৃশ্যপট। যা যুগযুগ ধরে আকঁড়ে ধরে আছেন কিছু দরিদ্র ও সৌখিন শিকারিগণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি জগন্নাথপুর উপজেলা সভাপতি মো.আরাফাত মিয়া বলেন, যারা বর্শি দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, এরাই প্রকৃত জীবন সংগ্রামী মানুষ। তবে কয়েকবার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় জগন্নাথপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আখতারুজ্জামান এর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।