বিএনপিতে গ্রেফতার ঝড়, নতুন কর্মসূচীর সন্ধান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৪৬:১৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি বলছে তাদের ওপর দিয়ে এখন ‘গ্রেফতার ঝড়’ চলছে। যদিও ‘মাঠের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নন’ এমন কিছু নেতার গ্রেফতার দলের মধ্যেই অনেককে বিস্মিত করছে।পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হতে পারে -এই বিবেচনায় হরতাল অবরোধ ছাড়াও নতুন কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে দলটি। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, হরতাল কিংবা অবরোধ ছাড়াও আর কী কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে দলের নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন দারুণভাবে চলছে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি সহিংস না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। সামনের পরিবেশ পরিস্থিতিই বলে দিবে আমরা কোন দিকে যাবে।দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেকজন নেতা কায়সার কামাল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যে কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে বলে মনে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী যে ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজন অনুভূত হবে সামনে সে ধরনের কর্মসূচিই আসবে।
ওদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিয়মিত ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন, বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ এখন ‘৭১ সালের দুর্বিষহ দিনগুলোর চেয়েও চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে এবং এরপর রোববার পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১২২ টি মামলা হয়েছে এবং গ্রেফতার হয়েছেন ৫২৮৪ জন।রিজভী অভিযোগ করেছেন, সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর এখন ‘গ্রেফতার ঝড়’ বয়ে চলেছে এবং তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কেউই এর বাইরে থাকছেন না।তবে পুলিশ জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে পরবর্তী সাত দিনে ৮৯টি মামলায় ২১৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।
এদিকে শনিবার রাতে ঢাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও ব্যরিষ্টার শাজাহান ওমরকে (বীর উত্তম) আটকের ঘটনায় দলের মধ্যেই বিস্ময় তৈরি হয়েছে। কারণ এই দুজন সমাবেশগুলোতে নিয়মিত বক্তৃতা দিলেও মাঠের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নন।এর আগে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপনকে আটকের ঘটনাও অনেককে অবাক করেছিলো। সংঘাত সহিংসতার মধ্যে কখনো তাদের খুব একটা দেখাও যায়নি।
তারও আগে দলের মহাসচিব হওয়ার কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেব মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করা হলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আটক করা হবে না বলেই ধারণা ছিলো দলের অনেকের।সেলিমা রহমান আরো বলেন, আসলে একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। কাকে কি জন্য টার্গেট করা হচ্ছে সেটা বোঝাই কঠিন। কিন্তু এতে আন্দোলনে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ মানুষই এখন আন্দোলনকে এগিয়ে নিচ্ছে।
নতুন কর্মসূচির সন্ধান :
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন সামনে আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে, সেজন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের চিন্তা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ হরতাল- অবরোধ ছাড়াও আর কী কর্মসূচি দেয়া যায় সেটি নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে এখন।নেতাদের ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র জানিয়েছে, হরতাল-অবরোধ চললেও সামনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, এমনকি নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে-এমন বিবেচনা থেকেই আরও নতুন কর্মসূচির খোঁজ করছে বিএনপি।
আগে নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় ঘেরাও পালন করে হরতাল-অবরোধে যাওয়ার চিন্তা থাকলেও ২৮ অক্টোবরের পরদিন হরতাল এবং এরপর একদিন বিরতি দিয়ে তিন দিনের অবরোধ পালন করেছে বিএনপি। কাল বুধবার থেকে তৃতীয় দফায় নতুন করে আরো ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।এরপর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হতে পারে পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম দুদিনের কর্মসূচি। এরপর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেগুলো কী ধরণের কর্মসূচি হতে পারে তা নিয়েই এখন বিশ্লেষণ করছেন দলের নেতারা।আবার এতো দিন ধরে আন্দোলন আর দেশজুড়ে এতো নেতার গ্রেফতারের পর কর্মসূচি ঘোষণার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা দলটির থাকবে কি-না তাও চিন্তায় আছে অনেকের।