শান্তিগঞ্জে গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মী, আটক ১১
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ৭:১১:০৯ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ সংবাদদাতা: ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের পর লাগাতার অবরোধে নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ। এ মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামী রাখা হয় আরও ৩০ থেকে ৪০জন। গ্রেফতার দেখানো হয় ৬জনকে। ৩১ অক্টোবর প্রথম দফা অবরোধের শেষ দিন সকালে পাগলা বাজারে পিক-আপের ভ্যান ভাঙচুরের অভিযোগে দ্বিতীয় মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ৩১জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত রাখা হয় আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে। পুলিশের দায়ের করা এই দুই মামলায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়। নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ দুই মামলায় ১শ ৬০ জন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়।
নৈরাজ্য আর নাশকতা সৃষ্টির মামলায় ও ঢাকায় পুলিশ হত্যা মামলায় কেন্দ্রিয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিনকে ৪ নভেম্বর শনিবার দুপুরে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯ এর একটি দল। পরে তাকে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর জেল হাজতে পাঠানো হয়। ২ নভেম্বর পাগলা বাজারে গাড়ি ভাংচুরের মামলায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমদকেও আসামী করা হয়। দুই মামলায় উপজেলা বিএনপির সকল সিনিয়র নেতাসহ দেড় শতাধিক কর্মীদেরও আসামী করা হয়েছে। তাদের ধরতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় কেন্দ্রিয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রওশন খান সাগর, জয়কলস ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সভাপতি সোহেল মিয়া ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. সাহিদ মিয়াসহ ১১ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মামলায় নাম আছে এমন অভিযুক্তদের ধরতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে নিজেদেরকে আত্মগোপনে নিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। শুধু নেতাকর্মীই নয়, বিএনপি সমর্থন করেন এমন সমর্থকেরাও ঘড়বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত শুধু তারাই নন, যারা মনে মনে বিএনপিকে সমর্থন করেন মনের শঙ্কা থেকে তারাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। গ্রেফতার এড়াতে তাদের এ আত্মগোপন বলে জানিয়েছেন অনেকে। বাইরে চলাফেরা করলে পুলিশ জেনে যাবে এই ভয়ে সারাদিন ঘরের মধ্যে বসে, শুয়ে, টিভি দেখে এবং ফেসবুকিং করে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। এতে করে বিড়ম্বনা বাড়ছে পলাতক থাকা ব্যক্তিদের। পাশাপাশি যারা পরিবারের উপার্জনের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের পরিবার পড়েছে উভয় সংকটে। কতদিন এভাবে পালিয়ে বেড়াতে হবে তা জানেন না কেউ।
নিজেদের উপর মামলা আছে এবং গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া আছেন জানিয়ে উপজেলা বিএনপি নেতা জিয়াউল হক জিয়া, যুবদল নেতা ছালিক আহমদ ও মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, প্রশাসনের কাছে এমন আচরণ আমরা আশা করিনি। তারা একটি দলের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে। আমরা এ উপজেলায় শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করি। বর্তমানে সেই রাজনৈতিক সহাবস্থান আর নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে আওয়ামীলীগ। তবে একটা কথা পরিষ্কার যে, হামলা মামলা দিয়ে জিয়ার সৈনিকদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, কোনো ভাবেই পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীর উপর ন্যায় আচরণ করছেন না। শান্তিগঞ্জে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কোনো নৈরাজ্য হয়নি। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে আমি এবং আমার নেতাকর্মীদের উপর। উপরের নির্দেশেই পুলিশ এমন আচরণ করছেন বলে আমি মনে করি। আমার নেতাকর্মীদের উপর যে মামলা দেওয়া হয়েছে তা তুলে নেওয়ার দাবি করছি। পাশাপাশি আনছার উদ্দিনসহ আমাদের যত নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। দুইটি মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছি। বাকীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। নিরপরাধ কাউকেই আমরা হয়রানি করছি না। মানুষ যে কোনো দলকেই সমর্থন করতে পারেন। তার মতামতকে আমরা সম্মান জানাই। তিনি বাড়িতে থাকলে আমরা তাকে ধরবো না। কিন্তু যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।