শীত এলেও কমছেনা ডেঙ্গু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৫৪:২৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : শীতের আমেজ শুরু হলে ডেঙ্গু প্রবণতা কমে আসবে-এমন কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু শীতের আমেজ শুরু হলেও কমছেনা ডেঙ্গু। বরং প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। নিয়মিত মৃত্যুও হচ্ছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।গতকাল বুধবার পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩২ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার।
গত শতাব্দীর ষাটের দশকে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর ২০০০ সালে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এরপর প্রতিবছর কমবেশি ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দিতে থাকে। তবে ডেঙ্গু বড় বড় শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সালে বড় বড় শহরের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামেও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।এ বছর ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪ হাজার ১৮০ জন। সিলেটেও এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ হাজারের কাছাকাছি। উপকূলের জেলাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ নতুন ঝুঁকি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।এ বছর সিলেটসহ ৬৪ জেলাতেই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, বহু গ্রামের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর অর্থ, সারা দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা আছে।
মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড সাধারণত বড় বড় শহরে চোখে পড়ে। গ্রামে সেই কর্মকাণ্ড নেই। গ্রামের মানুষের করণীয় সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। গ্রামে তাই ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, একটি দেশে বা অঞ্চলে একবার ডেঙ্গু দেখা দিলে তা আর যায় না, ফিরে ফিরে আসে। তবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে, বিশেষ করে মশকনিধন কর্মকাণ্ড হাতে নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়-এমন বহু নজির আছে। বাংলাদেশ থেকে ডেঙ্গু একেবারে নির্মূল হবে না। তবে ঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে এ বছর ডেঙ্গু এতটা ছড়াত না।
গত বছর নভেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৮৭৫ জন। এ বছর একই তারিখে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৮৯৫ জন; অর্থাৎ একই সময়ে এ বছর ১ হাজার রোগী বেশি। এসব রোগীর বেশির ভাগই গ্রামের।জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, এক দিনে বা এক বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। কয়েক বছরের চেষ্টায় আমরা হয়তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। তবে এখনই দেশব্যাপী সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
তিনি বলেন, এ বছর আর বৃষ্টি না হলে, শীত বাড়তে থাকলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমে আসবে। বৃষ্টির পানি না থাকলেও এডিস মশার বংশবিস্তারের মতো পানি বহু জায়গায় আছে। সুতরাং ডেঙ্গুও থাকবে।সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছি। পাশাপাশি এডিস মশা নির্মুলে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও মশা নিধনে নগরব্যাপী কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এডিস মশা যেহেতু ড্রেনের নোংরা পানিতে জন্মায় না, বরং বাড়িঘরের মধ্যে বা আশেপাশে পরিষ্কার পানিতে জন্মায়, তাই ঢালাওভাবে মশার ওষুধ ছড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনসচেতনতা।