সিলেটে ২০ মামলায় আসামি ৩ হাজার, বাড়ি ছাড়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০:২১ অপরাহ্ন
গ্রেফতার ৬০, বাড়ি গিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পুলিশ- অভিযোগ বিএনপির
এ টি এম তুরাব :
সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এ অবস্থায় সক্রিয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বেড়েছে। কেউ পুরনো মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন। আবার কেউ নতুন করে মামলার আসামি হচ্ছেন। এই চিত্র মহানগরীসহ সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে। এমন অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ দিনের মহানগরের ৬ থানায় ১৭টি মামলা করা হয়েছে। দুটি বাদে সব কটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি আছেন। এসব মামলায় এজাহারে নাম আছে ৩৮৬ জনের এবং বাকিরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে। এরই মধ্যে ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ অবস্থায় সিলেটে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা এখন বাড়িছাড়া। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এমনকি নগরে প্রকাশ্যে আসছেন না তারা। ফলে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি’র নেতাদের দাবি- কর্মসূচিতে দেখা মাত্রই পুলিশ বেসামাল আচরন করছেন। জরুরী প্রয়োজনে বের হলে করা হচ্ছে গ্রেফতার। বাড়ি-বাড়ি তল্লাশিও করা হচ্ছে। এ কারণে বিএনপি’র শত শত নেতা-কর্মী বাড়িছাড়া।
বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে হাজারো নেতা-কর্মী ঘরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে থাকছেন। অনেকে গ্রামাঞ্চলে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি চলে গেছেন। অনেকে আতঙ্কে মুঠোফোন বন্ধ রেখেছেন। গ্রেফতারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ভীতি তৈরি করতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে প্রতি রাতেই। মূলত কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মীরা যেন মাঠে নামতে না পারেন, সে জন্যই পুলিশী তৎপর। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্তে¡ও গণহারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর নামে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। তবে পালিয়ে থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দিনের বেলা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবরোধ কর্মসূচি সফল করছেন।
গত ২৮শে অক্টোবর সিলেট থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী গিয়েছিলেন ঢাকার সমাবেশে। এ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেটের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, নগর বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতে পারেন এমন নেতাদের বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মামলা। ইতোমধ্যে থানা ও এলাকাভিত্তিক এসব নেতা-কর্মীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেটা ধরেই চলছে অভিযান। প্রতিদিন গভীর রাতে বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় ঘরে থাকা নারী-শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে পুলিশ খারাপ আচরণ করছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে জেলা ছাত্রদলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বাড়িতে থাকলে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে। এজন্য এখন আর আমরা কেউ বাসা-বাড়িতে থাকি না। ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে না থেকে নিরাপদে অবস্থান করে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বলেছি।
জানা যায়, হরতালের দিন থেকেই সিলেটের রাজপথে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি সংঘবদ্ধ অবস্থায় না থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে জেলা ও মহানগর সহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্য কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তারা কখনো পুলিশের সঙ্গে, আবার কখনো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এতে মামলা হচ্ছে তাদের উপর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে যুবদলের ডাকা হরতাল চলাকালে ছাত্রদল ও শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। একটিতে ছাত্রলীগ নেতা ইমন আহমদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এসআই কল্লোল বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।
এদিকে ২৯শে এপ্রিল সিলেটে হরতালে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলা ও নগর পুলিশে ৯ মামলা করা হয়েছিল। গত ২৯ ও ৩০শে নভেম্বর এসব মামলা করা হয়। পুলিশ জানায়, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা কোতোয়ালি থানায় আটকদেরসহ হামলাকারীদের নামোল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। অপরটি এক ছাত্রলীগ নেতার মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনায় ওই ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে মামলা করেন। এছাড়া জালালাবাদ থানায় পুলিশ এসল্টের ঘটনায়, এয়ারপোর্ট থানায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এবং দক্ষিণ সুরমা থানায় সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় জননিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় এজাহার নামীয় ৬৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪৭০ জনসহ আসামি করে মামলা করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতা।
এছাড়া জেলার গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, বিশ্বনাথ থানায় পৃথকভাবে পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে এ পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে নগর ও জেলায় সমান সমান মামলা হয়েছে। এসব মামলার কোনোটিতে নাম উল্লেখ করে আবার কোনো কোনোটিতে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০ জনকে।
তিনি আরো বলেন, মামলা হয়ে তো শেষ নয়। নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে পুলিশ। নেতাদের না পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কখনো পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। অব্যাহত মামলা দায়েরের পর সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া রয়েছেন। রাতে কেউ বাসা কিংবা বাড়িতে থাকেন না। তবে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়ালেও নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি পালনে সক্রিয় রয়েছেন। সরকার আমাদের যতই হয়রানি করুক না কেন আমরা রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবো না।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো: শেখ সেলিম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এসব ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করতে পারে আমরা শুধু তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা কাউকে অহেতুক হয়রানি করছি না।