অনেক আশার বিশ্বকাপ হতাশায় শেষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ৯:৪৪:২৭ অপরাহ্ন
অসিদের কাছে ৮ উইকেটে হারলো বাংলাদেশ
স্পোর্টস ডেস্ক : অনেক আশা নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও হতাশায় হলো শেষ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটাও হলো মলিন। ৩শ’ রান করেও বোলারদের ব্যর্থতায় অসিদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৮ উইকেটে। আর অনায়াস জয়ে সেমি-ফাইনালের প্রস্তুতি সারল অস্ট্রেলিয়া।পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে শনিবার মিচেল মার্শের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩০৭ রানের লক্ষ্য ৩২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু অস্ট্রেলিয়ার টানা সপ্তম জয় এটি। পঞ্চাশ ওভারের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এটিই তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ২৯১ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।
বড় হারের পরও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় আপাতত আট নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুতে আজ রোববার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে নেদারল্যান্ডস কোনো পয়েন্ট না পেলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের।গত চার বিশ্বকাপের প্রতিটিতে অন্তত তিনটি করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের যাত্রা শেষ হয়েছে স্রেফ দুই জয়ে। ১৯৯৯ আসরে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেও দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। পরের আসর থেকে তারা ফিরেছিল বৃষ্টিতে পাওয়া ২ পয়েন্ট নিয়ে।আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৪.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান তোলে অসিরা।
চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু শুরুতেই উইকেট হারায় অসিরা। তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন। ১২ রানে ভাঙে অসিদের ওপেনিং জুটি। ১১ বলে ১০ রান করা ট্রাভিস হেডকে বোল্ড করেন তাসকিন। শুরুর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১২০ রান করেন দুই অসি ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। জুটি ভাঙেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। মিড অনে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৬১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
এরপর আর কোনো উইকেট হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন মার্শ। ৬৪ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন স্মিথ। বাকি কাজটুকু করেন মার্শ। বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনা করে খেলেন ১৩২ বলে অপরাজিত ১৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কার সাহায্যে গড়ে তোলেন ইনিংসটি। অসিরাও পায় সহজ জয়। বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ।
এর আগে ভারতের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অসিরা। অসি বোলিংয়ের বিপক্ষে শুরুটা দেখেশুনে করছেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। ১১.২ ওভারে ৭৬ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে বাংলাদেশ। দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে শিন অ্যাবোটের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। অ্যাবোটের লো বাউন্সারে ডিফেন্স করতে গেলেও মাঝ ব্যাটে লেগে ক্যাচ উঠে যায়। আউট হওয়ার আগে ৩৪ বলে ছয়টি চারে ৩৬ রান করেন তামিম। লিটন আউট হন ৩৪ রানে। অ্যাডাম জাম্পার বল সোজা ব্যাটে লং অনে তুলে দেন বাংলাদেশি ওপেনার। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নেন মার্নাস লাবুশেন।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও আউট হন ৪৫ রানে। ৫৭ বলে ছয়টি চারে খেলা শান্তর ইনিংস থামে রানআউটের দুর্ভাগ্যে। ২৮ বলে ৩২ রান করে মাহমুদউল্লাহও কাটা পড়েন রানআউটে। পুরো আসরে ব্যাট হাতে ব্যর্থ তাওহিদ হৃদয় আজ খেলছেন সহজ ও সাবলীল ক্রিকেট। ৬১ বলে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম অর্ধশতক। তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে পাঁচটি চার ও দুই ছয়ের সাহায্যে ৭৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মার্কাস স্টয়নিসের বলে লাবুশেনের ক্যাচে পরিণত হন হৃদয়।
জাম্পার বলে মিড উইকেটে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ২১ রান করেন তিনি। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ২০ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ৩০৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। অসিদের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন জাম্পা ও অ্যাবোট। একটি পান স্টয়নিস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩০৬/৮। (তামিম ৩৬, লিটন ৩৬, শান্ত ৪৫, হৃদয় ৭৪, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মুশফিক ২১, মিরাজ ২৯, নাসুম ৭, শেখ মেহেদি ২*, তাসকিন ০*; হ্যাজেলউড ৭-১-২১-০, কামিন্স ৮-০-৫৬-০, অ্যাবোট ১০-০-৬১-২, মার্শ ৪-০-৪৮-০, জাম্পা ১০-০-৩২-২, হেড ৬-০-৩৩-০, স্টয়নিস ৫-০-৪৫-১)
অস্ট্রেলিয়া : ৪৪.৪ ওভারে ৩০৭/২। (হেড ১০, ওয়ার্নার ৫৩, মার্শ ১৭৭*, স্মিথ ৬৩*; তাসকিন ১০-০-৬১-১, শেখ মেহেদি ৯-০-৩৮-০, নাসুম ১০-০-৮৫-০, মিরাজ ৬-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ৯.৪-১-৭৬-১)
ফল : অস্ট্রেলিয়া আট উইকেটে জয়ী।