কিনব্রিজ বন্ধের ৩ মাস, খুলছে কবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১:০৭:৪৭ অপরাহ্ন
এমজেএই জামিল : ২ দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার ক্বীনব্রিজের সংস্কার কাজ। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে ব্রিজ খুলে দেয়ার ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কথা দিলেও এরমধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ফলে দীর্ঘায়িত হতে পারে জনদুর্ভোগ।
এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে ব্রিজ খুলে দেয়ার দাবীতে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘সদর দক্ষিণ নাগরিক কমিটি, সিলেট’। রোববার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। একই দাবিতে রোববার সন্ধ্যায় অনুরূপ আরো একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে সিলেট-১ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বরাবরেও।
এর আগে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্বিনব্রিজ’র সংস্কার কাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পূর্ব) বরাবরেও আরো একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কারের জন্য কিনব্রিজ বন্ধের ৩ মাস পূরণ হচ্ছে আজ। দুইমাস সময় হতে নিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করলেও এখনো শেষ হয়নি কাজ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন নির্ধারিত সময়ের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে, খুলে দেওয়া হবে ক্বীনব্রিজ। তবে তা হয়নি।
এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে এরমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এই নির্ধারিত সময়েও ব্রিজটি খোলা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ আগস্ট কিনব্রিজ মেরামত, নবায়নসহ নির্মাণকাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুইমাস ব্রিজের উপর দিয়ে সবধরনের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর পথচারীদের চলাচল বন্ধ করতে সেতুটির দুই পাশে দেওয়া হয় টিনের বেড়া।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, কিনব্রিজের মেরামতকাজের জন্য ১৫ দিনের মতো সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ও পথচারীদের জন্য ক্বীনব্রীজ বন্ধ থাকতে হবে। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিজটি জন সাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী বলেও জানান।
পথচারী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে যাতায়াতের সহজপথ কিনব্রিজ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে মেরামতকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। মেরামতকাজ চলায় বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। সময় ও টাকা-দু’টিরই ক্ষতি হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে খেয়া পারপারের ইজারাদাররা এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।
জানা গেছে, ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ২ বছরেরও বেশী সময় পরে শুরু হয় সংস্কার কাজ।
সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিনব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। প্রায় ৯ দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর আর বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।
সেতু মেরামতের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, কিনব্রিজের মেরামতকাজ চলমান। দুই মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সেতুর দুই পাশের পাত অকেজো অবস্থা পাওয়া গেছে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। সেতুটি দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে আরও শ্রমিক নিয়োগ করে চলছে সেতুর কাজ।
৩০ নভেম্বরের আগেই পথচারীদের জন্য ক্বীনব্রিজ খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে রেলওয়ে সেতু বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, আরও দেড়মাসের জন্য ব্রিজটি দিয়ে যানবাহন ও পথচারী চলাচল বন্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জিসান দত্ত মঙ্গলবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সেতুটির দুই পাশে লাগানো পাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো মেরামত করতে সময় বেশি লাগছে। তবে ৩০ নভেম্বরের আগেই পথচারীদের জন্য ব্রিজটি খুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ব্রিজের ওপর কার্পেটিংয়ের পর সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে কিনব্রিজ খুলে দেয়ার দাবী জানিয়েছেন ‘সদর দক্ষিণ নাগরিক কমিটি, সিলেট’।
জেলা প্রশাসক বরাবরে গত রোববার দেয়া এক স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২ মাসের মধ্যে শেষ করার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) প্রকৌশল বিভাগ গত ১৬ আগস্ট থেকে চলাচলের অনুপযোগী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু করে। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ ৩০ নভেম্বরের পূর্বে সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কার্যতঃ স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে কচ্ছপগতিতে যেভাবে সংস্কার কাজ চলছে, এতে করে আগামী ৬ মাসেও এই কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের এহেন গড়িমসির ফলে জনদুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে এবং এ নিয়ে জনমনে প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠুভাবে সংস্কার কাজ শেষ করে কিনব্রিজ খুলে দিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে জেলা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানানো হয়।