অস্থির সময়ে নির্বাচনী তোড়জোড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ৩:৩০:১৮ অপরাহ্ন
আজ সিইসির ভাষণ, ঘোষণা হবে তফসিল
ভোটের সম্ভাব্য তারিখ ৬ জানুয়ারী
জালালাবাদ রিপোর্ট: রাজনীতির মারপ্যাচে পড়ে দেশ এখন রুদ্ধশ্বাস সময় পার করছে। সরকারের কঠোরতা, বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলগুলোর এক দফার দাবিতে অনড় অবস্থান ও টানা অবরোধে মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে অস্থিরতায়, অনিশ্চতায়, শঙ্কায়। এ অবস্থায়ও নির্বাচন আয়োজনের চুড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজই ঘোষণা আসতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ও তফসিল।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, আজ বুধবার বিকেল ৫টায় বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার কমিশনের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তফসিলের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভোটের তারিখ সম্ভাব্য রাখা হয়েছে ৬ জানুয়ারি।ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার বলেন, ৭০ (১৯৭০ সাল) পরবর্তী সময়ে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচনের তফসিল হয়েছে, সিইসি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতিকে অবহিত করেছেন। এবারও সেই রেওয়াজ অব্যাহত থাকবে। রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সিইসির ভাষণ ধারণ করে। তারপর একটি নির্ধারিত দিনে তা প্রচার করা হয়। এতে ভোটের দিকনির্দেশনাসহ সময়সূচি দিয়ে থাকেন সিইসি।
নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা এখনো হয়নি। বিএনপি ও জামায়াত বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।গতকাল এফবিসিসিআই আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে পড়েছে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
এম শঙ্কা-আশঙ্কার মাঝে ইসির সাথে আওয়ামী লীগও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।এমন পরিস্থিতি সোমবার যুক্তরাষ্ট্র তিন দলকে শর্তহীন সংলাপের বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়। অংশগ্রহনমুলক নির্বাচনের তাগিদ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর দেওয়া চিঠি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ চিঠি পেয়েছে কি-না জানা যায়নি। ডোনাল্ড লুর চিঠির প্রসঙ্গ গতকাল উঠেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও।
যদিও ডোনাল্ড লুর চিঠি তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলেছেন, নির্বাচনি তফসিলের সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্পর্ক নেই। সুনির্দিষ্ট সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যায় ওই ভাষণ প্রচার করা হয়। ওই ভাষণেই মূলত তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসি সূত্র জানায়, আজ বিকেলে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।এদিকে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে রেখেছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি, জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোট তফসিল ঘোষণা করা হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলছে।সূত্র বলছে, তফসিলের পরদিন বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি-জামায়াত। সচিবালয় ঘেরাও, ইসি ঘেরাও কর্মসূচি আছে আলোচনায়। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায় হরতাল-অবরোধ পালনে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হতে পারে।
পাতানো নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নেবে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, নির্যাতন-বাধা উপেক্ষা করে গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। যে কোনো সময় আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন হবে, গতি বাড়বে।তবে গতকাল গণমাধ্যমে খবর রটেছে, তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে হঠাৎই ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এনেছে কয়েকটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে একাধিক দল আছে, যারা সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তফসিল ঘোষণা এই হচ্ছে, এই হবে-এমন প্রেক্ষাপটে সমঝোতার কথাটি কেন সামনে এল, তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে হঠাৎ ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ জন্য ইসলামি এই দলগুলোর এমন অবস্থানের পেছনে সরকারি মহলের সায় আছে। তারা চাইছে, এ ধরনের একটি উদ্যোগ থাকুক। সংলাপে কার্যকর কিছু না হলেও এর লক্ষ্য, সরকার যে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সচেষ্ট, সেটি আন্তর্জাতিক মহলকে দেখানো। একই সঙ্গে বিএনপিকে আরও চাপে ফেলাও এর লক্ষ্য।
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি ইসিতে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) থেকে বন্ধ করা হয়েছে।
সকাল থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইসি ভবনের সামনে চার টিমের পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, যা আগে ছিল না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন ভবনে ঢুকতে হলেও গেটের সামনে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে । পাশাপাশি পুলিশি টহলও বাড়ানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশের গাড়ি নির্বাচন কমিশনের সামনে দিয়ে টহল দিচ্ছে।