প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত দেশের ৮ শতাংশ মানুষ : জরিপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৪৩:০৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : দেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে। তাদের মধ্যে ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৯ শতাংশ নারী। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ বা তার চেয়ে কমবয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আর সত্তরোর্ধ্বদের মধ্যে এই হার ৪৭ শতাংশ।
এ অবস্থায় দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন, ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক নানা সমস্যায় সম্মুখীন হয় বলে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) জরিপে উঠে এসেছে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটের ডেইলি স্টার সেন্টারে‘দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন (ওয়াশ) ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, জনসংখ্যাভিত্তিক সমীক্ষাটির কার্যক্রম গত নভেম্বের ২০১২ তারিখ থেকে অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩২টি জেলায় পরিচালিত হয়েছে। এই গবেষণায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে, শহর ও গ্রামের ছয় হাজার ৪৫৭ পরিবারের মোট ১৭ হাজার ৫৭৭ জন ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সর্বজন গৃহীত ‘ওয়াশিংটন গ্রুপের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলির’ মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ করা হয়। ওই প্রশ্নাবলির ছয়টি বিভাগের যেকোনো একটিতে কেউ ‘অনেক অসুবিধা’ বা ‘কিছুই করতে পারে না’ বলে উল্লেখ করলে অথবা ‘প্রতিদিন’ এবং ‘অনেক বেশি’ বিষন্ন বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭ শতাংশ এবং নারী ৯ শতাংশ। তবে ৫৯ বছর কিংবা এর চেয়ে কম বয়সীদের প্রতিবন্ধিতার হারের (৫ দশমিক ২ শতাংশ) তুলনায়, ৭০ বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার (৪৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এদিকে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওয়াশ বিষয়ক সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান সার্বিকভাবে চিহ্নিত করতে দুই হাজার ৩৭৮ জন প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই পানি সংগ্রহে অসুবিধার (৪৮ শতাংশ) সম্মুখীন হোন। ১৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় বাড়িতে খাবার পানি নিজে নিয়ে খেতে পারেন না। এর কারণ হিসেবে বেশিরভাগ (৯০ শতাংশের অধিক) শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং ১৬ শতাংশ অন্যের উপর নির্ভরশীলতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনা সভায় আরও জানানো হয়, জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ পরিবারে মৌলিক পয়নিষ্কাশন সুবিধা থাকলেও অধিকাংশের প্রবেশপথ এবং অবকাঠামোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন: হুইলচেয়ার-বান্ধব প্রবেশ পথ (৯৭ শতাংশ), উচ্চতা-সামঞ্জস্যযোগ্য প্যান বা কমোড (৯৭ শতাংশ), পানি ও হাত ধোয়ার সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার (৭৪ শতাংশ) অভাব রয়েছে।
এর ফলে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা শৌচাগার ব্যবহার করার সময় মল-মূত্রের সংস্পর্শে আসেন। বাড়ি থেকে ওয়াশ ফ্যাসেলিটির দীর্ঘ দূরত্বের কারণে বেশিরভাগ গ্রামে বা শহুরে বস্তিগুলোতে, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও, বিশেষত যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা) বা কমিউনিকেশান লিমিটেশন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে, ওয়াশ সুবিধাগুলোর সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার ভয় থাকে। এছাড়া মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতনের ভয়, আক্রমণাত্মক প্রাণীদের ভয়, এবং রাতে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এই গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ১২ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবকালীন পণ্য পরিবর্তন এবং ব্যবহার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য অন্য কারও সহায়তার প্রয়োজন হয়। এই সহয়াতার ঘাটতিতে প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে ইনকন্টিনেন্স সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত যাদের যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য, এই ইনকন্টিনেন্স সমস্যাটি একটি গুরুতর এবং জরুরি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট মাহবুব উল আলম বলেন, এই গবেষণার ফলাফলগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন, ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) বিষয়ক সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করবে। যা কেবল অবকাঠামোগত পরিবর্তনই নয়, বরং বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন এবং বাধা মোকাবেলা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করবে।