বিএনপির অনিশ্চয়তার মাঝেই প্রস্তুতি শুরু আওয়ামী লীগের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ৪:০০:১৮ অপরাহ্ন
১ম দিনে ১০৭৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি
জালালাবাদ রিপোর্ট: বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সরকারবিরোধী অবস্থানের মধ্যেই শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে দলটি।শনিবার সকালে সাড়ে দশটার দিকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তাঁর প্রতিনিধিরা।
এর কিছুক্ষণ পর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে শুরু করেন।সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোকে সাধুবাদ জানান। আর ‘যেসব দলের জনগণের ওপর আস্থা নেই, তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে এক হাজার ৭৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে দলটির আয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ফরম বিক্রি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগ থেকে ২১৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফরম বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগ থেকে ২০১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।এছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে ১৭৬ জন, খুলনা বিভাগ থেকে ১২৫, রংপুর বিভাগ থেকে ১০৯, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ১০৫, বরিশাল বিভাগ থেকে ৭৫ এবং সিলেট বিভাগ থেকে ৫৫ জন নেতা আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৪টি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন নেতারা। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন যে কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, জনগণ অংশগ্রহণ করলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্বাচন কমিশনও এখন পর্যন্ত একই ধরনের কথা বলে এসেছে।নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মনে করছেন অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করার সাথে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, সেটির সম্পর্ক নেই।
১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো তফসিল প্রত্যাখান করে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে কয়েকমাস ধরেই আন্দোলন করে আসছে এই দলগুলো।তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনে ভোট পড়ার হার তুলনামূলক কম হতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে। অন্যতম প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকলে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কিছুটা অনাগ্রহী হয়ে পড়ে বলে মনে করেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের, পরোক্ষ চাপকে অনেকটা উপেক্ষা করেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী ট্রেনের। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সেই ট্রেনে ইতোমধ্যেই সওয়ার হয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহযাত্রী হতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টির একাংশ, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফসহ কিছু দল।
অন্যদিকে রাজনীতির মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো এ তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যে এ ট্রেনের যাত্রী হবে না- তা প্রায় নিশ্চিত। এ অবস্থায় কোন ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে ২০১৪ সালের মত আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভেদের’ অবসান ঘটানোর আহ্বান জানালেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলের পক্ষ থেকেই সংলাপ আয়োজন করার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।