সিলেটে পদ ২ হাজার, পরীক্ষার্থী সাড়ে ৫২ হাজার : প্রাইমারী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪২:৩৩ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : আগামী ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। সিলেট অঞ্চলে প্রাথমিকে ২ হাজার সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদের বিপরীতে ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৫২ হাজার ৪৭০ জন। উক্ত পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে লড়ছেন ২৬ জন।
এদিকে সিলেট অঞ্চলে ১ হাজার ১৬০ টি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব স্কুলে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে কার্যক্রম। এছাড়া ১ হাজার ৯৬৪ টি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রমে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ী সিলেট বিভাগের চার জেলার ৫ হাজার ৫৪ টি বিদ্যালয়ে মোট ৩ হাজার ১২৪ জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৬০টি প্রধান শিক্ষক ও ১ হাজার ৯৬৪ টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এছাড়া বিভাগের ৪ জেলায় অফিস সহকারী, এমএলএসএস ও নৈশপ্রহরী সহ আরো সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে।
বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসের হিসেবে অনুযায়ী সিলেট অঞ্চলে ২৫ হাজার ৭৮১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২৩ হাজার ৮১৭ জন। এরমধ্যে খালি রয়েছে ১ হাজার ৯৬৪ টি পদ। যদিও চলতি নভেম্বর মাসে শুন্যপদের সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৮৬৫ টি সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ৬৭০ টি, সুনামগঞ্জে ৭ হাজার ২৫৪ টি পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ৭৫১ টি, হবিগঞ্জে ৫ হাজার ৩২৪ টি পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ২৪৬ টি ও মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৩৩৮ টি পদের বিপরীতে ২৯৭ টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে ৫ হাজার ৫৪টি প্রধান শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩ হাজার ৮৯৪ জন। এরমধ্যে ১ হাজার ১৬০ টি পদ খালি রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৩৩৫ টি, সুনামগঞ্জে ৩১০ টি, হবিগঞ্জে ২১৯ টি ও মৌলভীবাজারে ২৯৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৯৬৪টি সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদের বিপরীতে এবার আবেদন করেন ৫২ হাজার ৪৭০ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে সিলেট জেলার ৬৭০টি সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদের বিপরীতে আবেদন করেন ১২ হাজার ৯৫৫ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৭৫১টি পদের বিপরীতে আবেদন করেন ১৫ হাজার ১০৭ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২৪৬টি পদের বিপরীতে ১৩ হাজার ৬৪১ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ২৯৭টি পদের বিপরীতে আবেদন করেন ১০ হাজার ৭৬৭ জন।
একসাথে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি থাকায় পাঠদান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত শিক্ষকদের। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রমে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুন্যপদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) আগামী ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। প্রথমে ২৪ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলে চলতি মাসের ৮ নভেম্বর সেই তারিখ পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐদিন সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হবে। এদিকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দ্রুত ভাইভা নেওয়ার পর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এ ধাপের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপের মৌখিক পরীক্ষা চলমান অবস্থায় দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পর তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ করা হবে। সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ধাপে লিখিত পরীক্ষা পরিচালনার জন্য বিভাগগুলোর কেন্দ্রের সংখ্যা ও প্রার্থী ধারণক্ষমতার তথ্য জানতে চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চিঠি দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩-এর প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা (এমসিকিউ) শিগগিরই নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিভাগগুলোয় কেন্দ্রসংখ্যা এবং কেন্দ্রগুলোয় সর্বোচ্চ পরীক্ষার্থী ধারণক্ষমতার তথ্য প্রয়োজন। এ জন্য জেলার সম্ভাব্য কেন্দ্রের তালিকাসহ সর্বোচ্চ পরীক্ষার্থী ধারণক্ষমতার সংখ্যা সরেজমিন যাচাই করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়। কেন্দ্রের নাম, কেন্দ্রের ঠিকানা ও আসনসংখ্যার তালিকা পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
নিয়োগপ্রক্রিয়ায় গতি আনতে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য তিনটি ধাপ করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এসব বিভাগে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৪ মার্চ।
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ মার্চ ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আবেদনের শেষ সময় ছিল ১৪ এপ্রিল। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ১৮ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৮ জুলাই।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৬৬ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৯২৬টি শূন্যপদ রয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মোট শূন্যপদের মধ্যে ২৯ হাজার ৮৫৮টি প্রধান শিক্ষকের পদ এবং ৮ হাজার ৬৮টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন কর্মরত আছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইতিহাসের সবথেকে বৃহৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষকরা যোগদান করেন। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী ৩৭ হাজারের অধিক শিক্ষক নিয়োগ পান। নিয়োগের পরও দেশব্যপী শিক্ষক সংকট রয়েই যায়। এর পরপরই নতুন করে বিভাগ-ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ডিপিই সূত্রে জানা যায়, ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এই সময়ে নতুন করে অবসরে যাওয়াজনিত কারণে শুন্য হওয়া শিক্ষকদের পদ এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে। এই সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজারের অধিক হতে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, অবসরজনিত কারণে প্রতিমাসেই সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য হয়ে থাকে। তবে জুলাই থেকে নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় শুন্যপদ আরো বেড়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, কোন ক্ষেত্রেই শুন্যপদ থাকা কাম্য নয়। আর প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ১ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি নিয়োগ উত্তীর্ণদের মাঝ থেকে শিক্ষকের শুন্যতা পূরণ হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে লোকবল সঙ্কটের সমাধান করতে সরকার কাজ করছে।