অস্থিতিশীল গমের বাজার, কমছে সরকারি মজুদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ৯:০৫:০৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: যুদ্ধের প্রভাবজনিত অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে বিশ্ববাজারে গমের দাম এখন কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এরই মধ্যে ২০২১ সালের পর্যায়ে ফিরেছে খাদ্যশস্যটির দাম। যদিও উল্টো চিত্র দেশের বাজারে। ডলার সংকট ও টাকার অবমূল্যায়নে পণ্যটির আমদানি ব্যয় এখন বাড়ছে। এর প্রভাবে পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে গমের দাম বেড়েছে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। গমের দাম বাড়তির দিকে থাকায় এ সময় আটা-ময়দার দামও বেড়েছে কেজিতে ৩-৫ টাকা। মুদ্রাবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় গমের বাজার অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা বাজারসংশ্লিষ্টদের।
বাজারের এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেই গমের সরকারি মজুদ নেমে এসেছে কয়েক বছরের সর্বনিম্ন। খাদ্য অধিদপ্তরের গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, সরকারি পর্যায়ে গমের মজুদ এখন ১ লাখ ৩৪ হাজার টনের কিছু বেশি। যদিও তিন-চার বছর খাদ্যশস্যটির মজুদ সবসময়ই ছিল ২ থেকে ৪ লাখ টনের মধ্যে। চলমান ডলার ও বিনিময় হার সংকটের পাশাপাশি নানা প্রতিবন্ধকতায় ভারতসহ উৎস দেশগুলো থেকে আমদানি কমছে পণ্যটির, যা সরকারি মজুদসহ গোটা বাজারেই প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে দেশে গম উৎপাদন হয় সামান্য পরিমাণে। খাদ্যশস্যটির চাহিদার প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশই পূরণ করতে হয় আমদানির মাধ্যমে। গত বছরের শুরুর দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে দাম ২০২১ সালের সমপর্যায়ে নেমে এসেছে। যদিও দেশের বাজারে পণ্যটির মূল্য এখন ঊর্ধ্বমুখী।
ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও এখানে ভারত ও রাশিয়া থেকে আমদানীকৃত গমের দাম ছিল প্রতি মণ ১ হাজার ৩৫০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এ সময় কানাডা থেকে আনা গমের দাম মণপ্রতি ১ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আগে থেকে মজুদ থাকায় মিল পর্যায়ে গমের দামে এখনো তেমন একটা অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। তবে ভবিষ্যতে আটা-ময়দার দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘দেশের বাজারে গমসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই সহনীয় পর্যায়ের দিকে চলে এসেছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে ডলারের বাজার বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। বিশ্ববাজার থেকে কম দামে কিনলেও ডলারের বিনিময় হারের কারণে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সাধারণত লাভের পরিবর্তে লোকসান এড়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন।
গমের বাজারদরে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতায় ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকদের কোনো দায় নেই বলে দাবি করেন তিনি।গমের দাম বাড়তির দিকে থাকায় চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশে প্রতি কেজি আটার (প্যাকেটজাত) দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় ও ময়দার দাম ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় উঠে যায়। পরে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য সংশোধনের প্রেক্ষাপটে পণ্য দুটির বাজারমূল্য ৪৫ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে গমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আটা-ময়দার দামও আবার বাড়তে শুরু করেছে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারে আটার দাম বাড়তে শুরু করে ৮ নভেম্বর। ১২ নভেম্বর থেকে বাড়তে থাকে ময়দার দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হওয়া খোলা আটার দাম ৩ টাকা বেড়ে এখন ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সময় প্যাকেটজাত আটার দাম কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকা। খোলা ময়দার দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৮-৬০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দার দাম ২-৩ টাকা বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গমের দাম প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় আটা ও ময়দার দামও আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরা বিক্রেতারা।