নীল সমুদ্রে হলুদ উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ৩:২০:৩৪ অপরাহ্ন
ভারতের হৃদয় ভেঙ্গে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
আহবাব মোস্তফা খান: ‘দেবা দেবা’, ‘কেসরিয়া’, বিখ্যাত ‘লেহেরা দো’ গানের সঙ্গে ছিল এবারের বিশ্বকাপের থিম সং ‘দিল জশন বোলে’। এসব হিট গান নিয়ে ফাইনালের দিনে সুরকার প্রীতমের লাইভ পারফরম্যান্স ছিলো অন্যতম আকর্ষণ। প্রীতম ছাড়াও জনিতা গান্ধী, নাকাশ আজিজ, অমিত মিশ্র, আকাসা সিং ও তুষার যোশির পারফর্ম মাতিয়ে তুলেছিলো টিভি পর্দা, অহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। কিন্তু দিনের শেষে এসব যেন হারিয়ে গেলো বিষাদের কালো ছায়ায়। শিরোপার কাছে গিয়েও আপন ঘরে ভারত দেখলো হলুদ উৎসব, অস্ট্রেলিয়ার ছয় বারের বিশ^কাপ জয়।
আহমেদাবাদের সবরমতি নদীর তীরে নরেন্দ্র মোদী মাঠে দুপুর আড়াইটায় শুরু খেলা। কিন্তু গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা গেলো, সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে শুধু নীলের মেলা। পুরো স্টেডিয়াম যেন নীলাভ খামে আচ্ছাদিত। কিন্তু এমন নীল সমুদ্রের পারে কাল ক্রিকেটের চিত্রনাট্য লিখা হলো হলুদ খামে। তিনের বদলা নেয়া হলো না এই তেইশে।টানা ১০ ম্যাচে অপরাজেয় থাকলেও, মেগা ফাইনালের প্রবল চাপের মুখ চুপসে গেল ভারতের ব্যাটিং। টিম ইন্ডিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ যেন কাল হারিয়ে গেলো হতাশার চোরাবালিতে। যে ভারতীয় ব্যাটিং কার্যত দুমড়ে-মুষড়ে দিচ্ছিল প্রতিপক্ষকে, সেই ভারতীয় ব্যাটিংই মহাগুরুত্বপূর্ণ ফাইনালে এসে পড়লো বিপর্যয়ের মুখে।
তবে এর সব কৃতিত্ব অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার হিসেবি বোলিং আর চোখ জোড়ানো ফিল্ডিং। ফলে মাত্র ২৪০ রানেই গুটিয়ে গেল ভারত।আর ভারত এমন একটা স্কোরে আটকে গেল, যেখান থেকে জিততে হলে বোলারদের অনবদ্য, অবিশ্বাস্য কোনও কা- ঘটাতে হতো। কিন্তু না, পারলেন না শামি-সিরাজ-বুমরাহরা।
তাতে ২০ বছর আগের বদলা হল না ভারতের। ১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয় হল না। ১০ বছর ধরে আইসিসি ট্রফি না পাওয়ার খরা কাটল না। ভারত হেরে গেল। এবারের বিশ্বকাপে একটি মাত্র ম্যাচ হারল ভারত। আর সেটা ফাইনাল ম্যাচ। ট্রেভিস হেডের ‘ঠান্ডা মাথার’ শতরানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৬ উইকেটে। হেড ১২০ বলে ১৩৭ রান করে যখন ফিরলেন, পেলেন ভারতেরও অভিনন্দন!
হেডের বিশ^স্থ সাথী লাবুশেন অপরাজিত থেকে গেলেন ৫৮ রানে। শুরুতে ভারতীয় বোলাররা যে চাপটা তৈরি করেছিলেন, সেই চাপটাই ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ম্যাচের উপরে ক্রমাগত চেপে বসল অস্ট্রেলিয়া। ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল ভারত।
টস জিতে কামিন্স আগে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় বলেন, টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ বোঝা গেল না। এই পিচে আগে ব্যাট করে নিলেই বোধ হয় সুবিধা হত। কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে ভুল প্রমাণিত করলেন কামিন্স এবং অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা। সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তই অস্ট্রেলিয়াকে পৌঁছে দিলো শিরোপার এভারেস্টে।
অসিদের বিরুদ্ধে শুধুই তো বিশ্বজয়ের লড়াই নয়, ভারত কাল নেমেছিলো ২০০৩ সালের বদলা নিতেও। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ অধরাই থেকে গেলো। ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে কেবল চোখের জলই উপহার দিলেন রোহিতরা।
দলের অতি প্রয়োজনের সময় আউট হয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না বিরাট কোহলিও। আউট হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছিলো তার অশ্রসজল চোখ। অনেকেই এই ছবি দেখে লিখেছেন, এখনই ভেঙে পড়ার সময় হয়নি। খেলা অনেকটাই বাকি। হতাশা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে ভারতকে। তবে শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাড়ানো হলো না। কোহলিদের চোখের জলেই শেষ হলো ২০২৩ বিশ্বকাপ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একেবারে মন্দ করেনি ভারত। শক্ত হাতেই সূচনা করেন রোহিত শর্মা। তবে ব্যর্থ হন শুভমান গিল। তিনি ৪ রানে আউট হয়ে ফিরলে ১৫০ কোটির প্রত্যাশা কাঁধে নিয়ে ২২ গজে নামেন কোহলি। আবারও হয়তো তাঁর ব্যাট থেকে আসবে একটা শতরান। এই আশাতেই ছিলেন দর্শকরা। কিন্তু স্টার্ক, কামিন্সদের দাপটে সে লক্ষ্যে পৌঁছনো হল না। কামিন্সের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ৫৪ রান করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। স্টেডিয়াম জুড়ে তখন রাজ্যের নিস্তব্ধতা। মাথায় হাত সমর্থকদের। তার আউটের পর একের পর এক উইকেটের পতনে গ্যালারীভর্তি হাজারো ভারতীয়র চোখের কোণে জমে যায় অশ্রু। কোহলিও যেন কাল আবেগের কাছে মানেন হার।
কোহলি ছাড়াও কেএল রাহুল ১০৭ বলে করেন ৬৬ ও রোহিত শর্মা ৩১ বলে ৪৭ রান করেন। কিন্তু এমন বিবর্ণ হতশ্রি ব্যাটিংয়ে কি ফাইনালের রঙিন মঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে আটকানো সম্ভব? সম্ভব যে নয়, ভারতের ব্যাটিং শেষেই মন্তব্যটি ছিলো ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।
বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাটিং দাঁড়িয়ে ছিল রোহিত, কোহলি এবং রাহুলের উপর। শেষ দিকে রান করেন শ্রেয়াসও। কিন্তু তাঁদের এক দিন খারাপ গেলে ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডারের পক্ষে যে দলকে ভরসা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, সেটা বোঝা গেল ফাইনালে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। নক আউট মানে তো একটি ম্যাচেই সব শেষ!