দীর্ঘ বন্ধ ক্বীনব্রিজ : খেয়াঘাটে জমজমাট বাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ৭:১৬:৫৫ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল :
সিলেটের প্রবেশদ্বার ক্বীনব্রিজ সংস্কারের জন্য বন্ধ আছে প্রায় ৩ মাস। ব্রিজ বন্ধ থাকায় আগেই জমজমাট হয়ে উঠেছিল খেয়া পারাপার। এবার জমে উঠেছে নদী তীরের ভ্রাম্যমাণ বাজার।শুরুতে এক দু’জন হকার খেয়াঘাটে বসতেন। তবে এত দীর্ঘ সময় ব্রিজ বন্ধ থাকবে বুঝতে পারেন নি কেউ। ফলে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে হকারের সংখ্যা। সেই সংখ্যা বেড়ে রীতিমতো তা এখন নদী তীরের গ্রামীণ অনেক বাজারের মতোই জমজমাট। প্রথমে কেবল ব্রিজের উত্তর দিকে বাজার বসলেও দক্ষিণ তীর ছিল ফাঁকা। দক্ষিণ তীরে লোকজনের আনাগোনা ছিলনা। তবে ব্রীজ বন্ধ হওয়ার সুবাধে খেয়া পারাপার শুরু হয়। এতে বাড়ে লোকজনের আনাগোনা তাই এখন দক্ষিণ তীরেও হকারের সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে বলছেন গুরুত্বপূর্ণ এই ক্বীনব্রিজ এতদিন বন্ধ থাকবে ভাবিনি। যেহেতু ব্রিজ বন্ধ, মানুষজন আগের মতো খেয়া পারাপার করছেন তাই আমরাও ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছি।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে খেয়াঘাটের সাথেই হকাররা বসেছেন নানান পণ্যের পসরা সাজিয়ে। কেউ কেউ দোকান খুলেছেন মাত্র, তারা ব্যস্ত জোগাড়যন্ত্র করতে। শুরুতে ক্বীন ব্রিজের নিচে যে পথ দিয়ে লোকজন এসে নৌকায় উঠেন সেই পথের পাশেই তারা বসতেন। এখন ধীরে ধীরে তা আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে। হকাররা প্লাস্টিকের জুতা, মোবাইলে ইয়ারফোন, ডাটা ক্যাবল, শনপাপড়ি, কোমরের বেল্ট, মোজা ও আন্ডার গার্মেন্টস, মোবাইলের সিমকার্ড ইত্যাদি নিয়ে বসেছিলেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তা বেশ জমে উঠে। উত্তর সুরমা থেকে দক্ষিণ সুরমায় যারা যাতায়াত করেন তারাই মূলত এসব পণ্যের ক্রেতা। দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন। ফলে যেসব যাত্রী দূর পাল্লার বাস ও রেলে ভ্রমণ করেন তারা যাত্রা পথে সাময়িক ব্যবহারের জন্য এসব পণ্য বেশি ব্যবহার করেন। সিদ্দিক আহমদ নামে এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন অবরোধে ক্লাস পরীক্ষা নেই। তাই সিলেট থেকে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন। ট্রেনে করে যাবেন তাই যাওয়ার সময় এখান থেকে ইয়ারফোন কিনে নিচ্ছেন। তিনি বলেন জার্নিতে ইয়ারফোন বহন একটা ঝামেলা, বারবার তার পেছিয়ে যায়। তাই সঙ্গে রাখি না। বাইরে দূরপাল্লার কোথাও যেতে এসব দোকান থেকে কমদামে ইয়ারফোন কিনে নিই। এগুলোর মান খুব ভালোনা তবে কাজ চলে।
এদিকে দুইমাস সময় হতে নিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করে সময় পেরিয়েছে তিনমাস। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি ক্বীনব্রিজের সংস্কার কাজ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন নির্ধারিত সময়ের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হবে, খুলে দেওয়া হবে ক্বীনব্রিজ। তবে তা হয়নি। অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, ক্বীনব্রিজ বন্ধ রেখে খেয়াঘাট ইজারার নামে দীর্ঘদিন ফায়দা হাসিল ও হকার বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এরকম হলে ক্বীনব্রিজ নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহের দানা আরও জমাট বাধবে।
এরআগে গত ১৬ আগস্ট ক্বীনব্রিজে মেরামত, নবায়নসহ নির্মাণকাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দুইমাস ব্রীজটিতে সবধরনের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর পথচারীদের চলাচল বন্ধ করতে সেতুটির দুই পাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময় অতিবাহিত হলেও সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। তখন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল প্রকৌশল বিভাগ বলেছিল, ক্বীনব্রিজের মেরামতকাজের জন্য আরও দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ও পথচারীদের জন্য ক্বীনব্রিজ বন্ধ থাকতে হবে।
পথচারী ও স্থানীয়রা শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে যাতায়াতের সহজপথ ক্বীনব্রিজ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে মেরামতকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। মেরামতকাজ চলায় বেশ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। সেতু দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। সময় ও টাকা-দু’টিরই ক্ষতি হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে খেয়া পারপারের ইজারাদাররা এবং সিএনজি অটোরিকশাওয়ালারা।
সওজ সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ ক্বীনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সিলেটের সওজ। একই বছরের জুন মাসে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে নানান জটিলতায় সংস্কারকাজ হচ্ছিল না।