নগরে দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী খুন : শরীরে ২০টি ধারালো আঘাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ৯:০৬:০৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে নিজ দলের ক্যাডারদের ছুরিকাঘাতে আরিফ আহমদ (১৯) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- তার শরীরে ২০টি সুচালো ও ধারালো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে রক্তনালি কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া আরিফের শরীরে আরও তিনটি হালকা জখমের চিহ্ন রয়েছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শামসুল ইসলাম বলেন, নিহত আরিফের দুই পায়ের ঊরুর পেছনের দিকে, গোড়ালিতে ও হাতে এসব আঘাত লেগেছে। নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হবে।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে নিহত আরিফের ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় গত রাত ৮টা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি।
নিহত আরিফ আহমদ বালুচর এলাকার বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক ফটিক মিয়ার ছেলে। তিনি টিলাগড় এলাকার স্টেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। আরিফ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে রাজনীতি করতেন। তবে তার দলীয় কোনো পদ-পদবি নেই।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ খুনের ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। তারা হলো- আনহাছ আহমদ ওরফে রনি (২৩) ও মামুন মজুমদার (৩২)। দু’জনই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেছে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, সোমবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরের বালুচর টিবি গেট এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে কয়েক যুবক আরিফকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ সময় আরিফের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, একটি পক্ষ টিলাগড় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছিল। পূর্বপরিকল্পিতভাবে আরিফকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদের পক্ষের কর্মীরা ছুরিকাঘাত করে খুন করেছেন। তার শরীরে ১৬-১৭টি কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর আগেও একই পক্ষের কর্মীরা আরিফকে মারধর করেছিলো। আর এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিসিকের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপু। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটি দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের লাশ নিতে আসেন মা আখি বেগম। এ সময় তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, খবর পেয়ে দৌড় দিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবি পরে হিরণ মাহমুদ নিপু মোটরসাইকেলে উঠে চলে যাচ্ছেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় ছেলেকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে ছেলে তাকে বলেছিল, হিরণ মাহমুদ নিপু, রনি, মামুন, হেলালসহ ১৫-২০ জন মিলে তার উপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আরিফের বন্ধুর সঙ্গে অন্যদের পূর্ববিরোধ ছিল। বন্ধুকে না পেয়ে কয়েক দিন আগেও আরিফের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় আরিফের বাঁ হাতের আঙুল কেটে গিয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর এ ঘটনায় সোমবার শাহপরান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।