যোগদান করেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি সিলেটের ৩৬ স্কুল শিক্ষক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ৮:৩৭:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সদ্য নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদানে বাধা দিলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সভাপতি নয় খোদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সদ্য নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে যোগদান করা মোট ৩৬ জন শিক্ষকের এমপিওভুক্তি আবেদনের ফাইল বাতিল করা হয়েছে।
এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাউশি মহাপরিচালক ও এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বরাবর এমপিওভুক্ত হতে না সিলেটের স্কুল পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত হতে না পারা ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এনটিআরসিএ কর্তৃক ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করলে অনলাইনে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কর্তৃক তা বাতিল করা হয়। বাতিলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন “মাউশি ঢাকার গত ১৮/০৫/২০২৩ ইং তারিখের এমপিও কমিটি সুপারিশে আপাতত অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর বয়সি শিক্ষকদের এমপিও ভুক্ত না করা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়”। কিন্তু সেখানে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৫নং শর্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে আমাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে আছে। এছাড়াও এনটিআরসিএ ও সরকারি সকল শর্ত মেনে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাই ও যোগদান করি। বর্তমানে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।
জানা গেছে, ২১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫নং শর্ত মোতাবেক আবেদনকারীদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে হতে হবে। সে মোতাবেক ৩৫ বছর বা তার নিচের বয়সীরা আবেদন করতে পারবেন। অর্থ্যাৎ নির্ধারিত বয়সসীমার প্রার্থীরা চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ পেলে তাদের নিয়োগে বাধা নেই।
অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ব্যতীত) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে ৩০-০৬-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫-০৩-২০২০ তারিখে নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ/ স্বায়ত্তশাসিত/জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ব্যতীত) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে কোডিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সে সকল দপ্তর/প্রতিষ্ঠা ন এর ৩০-০৬-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বয়স ২৫-০৩-২০২০ তারিখে সর্বোচ্চ বয়সসীমার মধ্যে থাকলে উক্ত প্রার্থীগণ আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
জন প্রশাসনের এই প্রজ্ঞাপনের আলোকেই এনটিআরসিএ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫নং শর্ত উল্লেখ করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবেদনে বয়সে যে শর্ত দেওয়া হবে সেই শর্ত মেনে আবেদন করা হলে নিয়োগ যেদিনই হোক সেটাতো বয়সের জটিলতার কোন বিষয় নয়। উদাহরণ স্বরুপ এই কর্মকর্তা বলেন, ধরুন আপনি সরকারি কোন চাকরিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ আবেদন করলেন যেখানে আপনার বয়স ২৯ বছর ১১ মাস ২৮ বা ২৯ তিন। আপনি ৩০ প্লাস না হওয়ায় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের সুযোগ পেলেন। পরীক্ষা-ভাইভা এবং চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে ২ কিংবা তিন বছর লেগে গেল তখন আপনার বয়স ৩২ বা ৩৩ বছর। তাহলে কি আপনি চাকরি পাওয়ার যোগ্য না। এখানে নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী যে বয়স বেধে দেওয়া হয়েছে নিয়োগ যেদিনই হোক সেটা আটকানোর কোন সুযোগ নেই।
এমপিও বঞ্চিত প্রার্থিরা বলেন, আমরা মাউশি, এনটিআরসিএ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। সকলেই বলেছেন আমাদের এমপিওভুক্তিতে কোন বাধা নেই, নিয়োগ পেয়েছেন যোগদান করেছেন এমপিওভুক্তও হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আমাদের বয়সেও বাধা নেই। তারপরও আমরা এমপিওভুক্ত হতে পারছি না। বেতনবিহীন আর্থিক সংকটে আমরা দিনাতিপাত করছি। এই দপ্তর সে দপ্তর থেকে শুধু আশ্বাস পাচ্ছি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা কোন বিষয় না। এনটিআরসিএ থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে যোগদান করেছেন, ক্লাস পরীক্ষা নিয়েছেন সেক্ষেত্রে তিনি এমপিওভুক্ত হবেন। তবে ৩৫ প্লাস কিছু শিক্ষকদের নিয়ে আমাদের জটিলতা তৈরি হলে তারা এনটিআরসিএ থেকে লিখিত আনায় আমরা সবাইকে এমপিওভুক্ত করে ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে এনটিআরসিএ। তারা যাচাই বাছাই করেই চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। শিক্ষকরা সুপারিশ পেয়ে যোগদান করেছে এবং ক্লাস করাচ্ছে। তারা তো এমপিওভুক্তির যোগ্য। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এখানে বাধা হবার কথা নয়। তবুও বিষয়টি এনটিআরসিএ ভালো বলতে পারবে। আমার জানা মতে আমাদের অধিদপ্তরে এরকম জটিলতা তেমন হয়নি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট আঞ্চলিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোঃ আবু সাঈদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমি নিজেও মনে প্রাণে চাই যে সকল শিক্ষক যোগদান করেছেন তারা এমপিওভুক্ত হোক। আমি সবে মাত্র অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। যত দ্রুত সমাধান করা যায় সেটা নিয়েই কাজ করছি। আগামী ২৭ নভেম্বর এমপিও কমিটির সভা আছে। সেখানে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ৩৫ এর উপরে যাদের বয়স তাঁদের বিষয়ে সভা হয়েছে। ৩৫ এর অধিক বয়সীদের এমপিওভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫নং শর্ত মোতাবেক আবেদনকারীদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে হতে হবে। আবেদনের সময় ঐ শিক্ষকদের বয়স ৩৫ এর নিচে ছিল সেক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে ৩৫ প্লাস কেন ধরছে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আবেদনের সময় যদি তাদের নির্ধারিত বয়সসীমা থেকে থাকে তাহলে তারা তো ৩৫ উর্ধ্ব নয়। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখার সহকারী পরিচালক এস.এম জিয়াউল হায়দার হেনরী সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে এস.এম জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, এমপিও নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে ৩৫ এর অধিক বয়সধারীদের এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। সে হিসেবে ৩৫ এর অধিকদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়েছি। ধরুন সরকারি চাকরিতে আপনার বয়স ৩০ এর অধিক হলে কি আপনি আবেদন করতে পারবেন ? তেমনই .৩৫ এর অধিকদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য। গত ২১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫নং শর্ত মোতাবেক আবেদনকারীদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে হতে হবে। আবেদনের সময় ঐ শিক্ষদের বয়স ৩৫ এর নিচে ছিল সেক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে ৩৫ প্লাস কেন ধরছে সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বিষয়টি তো এমন হবার কথা নয়। নিয়োগ সার্কুলেশনে যে শর্ত দেওয়া আছে সে অনুযায়ী করতে হবে। এটা আমি খোঁজ নিব।
বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তারা বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী বিষয়টি হবে। খুব দ্রুতই এটার সমাধান হবে।