এইচএসসির ফল : ‘ইংরেজী ভীতি ও পূর্ণ সিলেবাসে’ সিলেটের খারাপ ফল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ৩:০৩:১০ অপরাহ্ন
পাশের হার কমেছে পৌণে ১০ শতাংশ, জিপিএ-৫ কমেছে ৩ হাজার ১৭২টি
স্টাফ রিপোর্টার: গত বছর এবং এর আগের বছর অজুহাত ছিলো ‘বন্যা’। এবার কোন অজুহাত ছাড়াই খারাপ ফল করেছে সিলেটে বোর্ড। কমেছে পাশের হার, জিপিএ-৫ এবং শতভাগ পাশ প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, গত বছরের মতো এবারো নয় বোর্ডের মাঝে ছয় নম্বরে সিলেট।
গত বছর (২০২২) পাশের হার ছিলো ৮১ দশমিক ৪০। এর আগের বছর (২০২১) পাশের হার ছিলো ৯৪ দশমিক ৮০। আর এবার পাশের হার ৭১ দশমিক ৬২। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে এবার পাশের হার কমেছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর দুই বছরে পাশের হার কমেছে মোট ২৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠার পর গতবছর সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির (৪ হাজার ৮৭১টি) রেকর্ড হয়েছিলো সিলেটে। আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ জন, অর্থাৎ জিপিএ-৫ কমেছে ৩ হাজার ১৭২টি।
বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, খারাপ ফল এবার দুটি কারণে। প্রথমত, ইংরেজী ভীতি সিলেটের খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী। এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৮২ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিশেষ করে শহরের বাইরের অর্থাৎ মফস্বলের কলেজগুলি ইংরেজী ভীতি প্রকট। আর এর প্রভাব পড়ছে ফলে। ইংরেজী ভীতির মূল কারণ মফস্বলে উপযুক্ত শিক্ষকের সংকট। এছাড়া মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ায় সামগ্রিক ফলাফল প্রভাব পড়েছে।
দ্বিতীয়ত, খারাপ ফলের কারণ হলো তিন বছর পর পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়া। তিন বছর ধরে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার বেশি ছিল। এবার সব বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হারে প্রভাব পড়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল বলেন, গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি বিষয়ে নার্সিং প্রয়োজন। দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ইংরেজির দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজর দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের ভালো প্রশিক্ষণ, ভালো ইংরেজি ও গণিতের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এবং নজরদারির তাগিদ দিলেন তিনি।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালের সঙ্গে এবারের ফলাফলের পার্থক্য করা যাবে না। কারণ ওই সময় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ছিল। এবার পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। যে কারণে আমরা ২০১৮ ও ২০১৯ সালের পরীক্ষার সঙ্গে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের তুলনা করছি। ২০১৮ সালে পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১১ এবং ২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এদিকে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার সিলেটে শতভাগ পাস করেছে ২টি কলেজ, যা গত বছর ছিল ১১টি। তবে শতভাগ ফেল কলেজ নেই। এবার সিলেট বোর্ডে ৮৩ হাজার ১২৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৫৯ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ২৩ হাজার ৯১৬ এবং মেয়ে ৩৫ হাজার ৬২০। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ৬১৯ এবং মেয়ে ৮৮০ জন।
সবকিছুতে এগিয়ে ছাত্রীরা :
সিলেট বোর্ডের অধীনে এইচএসসির ফলাফলে সব সূচকে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এবার ৪৮ হাজার ৭৫১ ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৫ হাজার ৬২০ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক শূন্য ৭। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৮০ জন। এদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৫৮। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ৩৪ হাজার ৩৭২ জন ছাত্র। এর মধ্যে পাস করেছে ২৩ হাজার ৯১৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮১৯ জন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল বলেন, সিলেটে ছাত্রদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এজন্য ছাত্রদের সংখ্যা কম।এ ছাড়া ছাত্রীরা পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হওয়ায় পাসের হার বেশি।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে :
বরাবরের মতো বিভাগভিত্তিক পাসের হারে এগিয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৪। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ জন। মানবিকে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২৫৮ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৪২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৬ শিক্ষার্থী।বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২ হাজার ৯৫৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ১২ হাজার ৮২৬ জন। এরমধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৪৪৩ এবং মেয়ে ৭ হাজার ৩৮৩ জন।মানবিক বিভাগে ৫৮ হাজার ৭১৬ জন অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৫৮ হাজার ৩০২ জন। এরমধ্যে ছেলে ২৩ হাজার ২৬৮ জন এবং মেয়ে ৩৫ হাজার ৩৪ জন।ব্যবসা শিক্ষায় ১২ হাজার পরিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১১ হাজার ৯৯৫ জন। এরমধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৬৬১ জন এবং মেয়ে ৬ হাজার ৩৩৪ জন।
বিভাগে এগিয়ে সিলেট জেলা :
সিলেট বোর্ডের অধীনে বিভাগের চার জেলার মধ্যে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে গতবারের মতো এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। জেলায় এবার পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১০৩ জন। পাসের হারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ। জেলায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৫৯। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১২ জন। পাসের হারের দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে মৌলভীবাজার। জেলার পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৫। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭০ শিক্ষার্থী। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ২১। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৪ জন।
কোন বোর্ডে কত ফল : নয় সাধারণ বোর্ডের মাঝে এবার সেরা ফল করেছে বরিশাল বোর্ড। বরিশাল বোর্ডে পাশের হার ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া যথাক্রমে ঢাকা বোর্ডে পাশের হার ৭৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এছাড়াও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ এবং মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭৫।