মান্নান সমর্থকদের উচ্ছ্বাস, ডন সমর্থকদের হতাশা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৪৩:০৬ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে এবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড তাকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। এ নিয়ে এমএ মান্নান চর্তুথবারের মতো দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন পেলেন। এতে মান্নান বলয়ের নেতাকমীর্দের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। মান্নান সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করছেন জগন্নাথপুর পৌর শহরে ও শান্তিগঞ্জে।
অপরদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন। পরপর চার দফা তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার দলের প্রার্থী হচ্ছেন এমন প্রত্যাশা ছিল ডন সমর্থকদের। কাঙ্খিত প্রত্যাশা অর্জনে ব্যর্থ হওয়াতে স্তব্ধ ডন সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে এম এ মান্নান ও ডন সমর্থকদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা বিরাজ করছিল। দুইপক্ষের সমর্থকরা শতভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছিলেন।
দলীয় নেকামীর্দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ একাধিকবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচন হয়। নির্বাচনে পিতার শূন্য আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সামাদপুত্র ডনের। কিন্তুু আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তিনি প্রার্থী হননি। তবে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক সচিব এম. এ মান্নান অংশগ্রহণ করেন। তিনি চার দলীয় জোটের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর নিকট সামান্য ভোটে পরাজিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও পরবতীতে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপালনকালে এমএ মান্নান তাঁর নির্বাচনী এলাকাসহ সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেন। ক্লিন ইজেমের ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এমএ মান্নান বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন তাঁর নির্বাচনী এলাকায়।
অপরদিকে সামাদপুত্র আজিজুস সামাদ ডন তাঁর বাবার মৃত্যুর পর থেকে নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করেন। এলাকার মানুষের সুখ দু:খে ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ছিল সরব। ২০০৫ সালে পিতার শূন্য আসনে উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে বয়কট করলেও ২০০৯ সালে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রার্থী এমএ মান্নানের নিকট সামান্য ভোটে পরাজিত হন। নির্বাচনে হেরে গেলেও মাঠ ছাড়েননি তিনি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে সদস্য পদে দুইবার মনোনীত হন। দীর্ঘকাল ধরে মাঠে থাকায় ডন সমর্থকদের শতভাগ প্রত্যাশা ছিল এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন আজিজুজ সামাদ। কিন্তু সব হিসেব নিকেশ পাল্টে মান্নানই চড়লেন নৌকা।
আজিজুস সামাদ ডনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সুত্রধর বীরেন্দ্র জানান, আমাদের প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর থেকেই দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে মাঠে কাজ করে আসছেন আজিজুস সামাদ। দীর্ঘদিন মাঠে থাকার কারণে এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেন তিনি। বারবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও এবার প্রত্যাশা ছিল বেশি। সে কারণে নির্বাচনের লক্ষ্যে এলাকায় বাসা নিয়েছিলেন। কিন্তুু এবারও বঞ্চিত হওয়াতে সমর্থকদের মধ্যে হতাশা আছে। আজিজুস সামাদ ডন ফোন রিসিভ না করায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, আমি কৃতজ্ঞ জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট এবারও আমাকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার জয় সুনিশ্চিত করে নেতৃত্বে আসনটি উপহার দিতে চাই।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দলীয় ফরম কিনে জমা দিয়েছিল ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। মান্নান ও ডন ছাড়াও মনোনয়ন জমা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন পিপি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম।