জগন্নাথপুরের শিক্ষকদের লন্ডন যাওয়ার হিড়িক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৫৯:২০ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: উচ্চাভিলাসী জীবনের আশায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে লন্ডনে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। এ থেকে বাদ যাননি শিক্ষকরাও। যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রমে। সোনার হরিণ নামে খ্যাত সরকারি চাকুরি ফেলে পাড়ি জমাচ্ছেন লন্ডনে। ফলে দিনে দিনে বেড়ে চলেছে শিক্ষক সংকট। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। কাঙ্খিত শিক্ষা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতো ইতোমধ্যে কেয়ার, স্টুডেন্ট ও স্পাউস ভিসায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা থেকে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন। আরো অনেকে লন্ডনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এমতাবস্থায় শিক্ষক সংকটের প্রভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ডেপুটেশনে শিক্ষকদের দিয়ে কোন রকমে পাঠদান চালু রেখেছেন। আর কতোদিন এভাবে স্কুল চলবে, এ নিয়ে অভিভাবকরাও চিন্তিত।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, উচ্চাভিলাসী জীবনের আশায় শিক্ষকদের লন্ডন যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিধিমোতাবেক গেলে কোন সমস্যা হতো না। তারা সরকারি চাকুরি ঝুলন্ত রেখে যাওয়ায় শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে। আইনি দীর্ঘসূত্রিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাৎক্ষণিক বহিস্কারসহ শুন্যপদ ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তা না হলে দিনে দিনে শিক্ষক সংকট আরো প্রকট হবে।
যোগাযোগ করা হলে ইতোমধ্যে লন্ডন যাওয়াদের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের গোলাপাড়াপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শের আলী জানান, জগন্নাথপুরের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষক লন্ডনে অবস্থান করছেন। কেয়ার, স্টুডেন্ট ও স্পাউস ভিসায় সবাই লন্ডন এসেছেন। এর মধ্যে কেউ স্থায়ী ও কেউ অস্থায়ীভাবে আছেন। আমি উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে এসেছি। ফের দেশে ফিরবো। তাই চাকুরি থেকে অব্যাহতি নেইনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছুটি চেয়েও পাইনি। তাই না বলে আসতে হয়েছে। আমার মতো আরো অনেকে এরকম অস্থায়ীভাবে আছেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাশ বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার ১৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৭৬৮ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত রয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে ২০ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ। শুনেছি তারা নাকি লন্ডন চলে গেছেন। তাই তাদের মধ্যে দুই ধাপে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মামলা করেছেন। অন্যদের বিরুদ্ধেও ক্রমান্বয়ে মামলা হবে। মামলার মাধ্যমে শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৩/৪ জন শিক্ষক ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে লোন নিয়েছেন। এ লোন ফেরত পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি টাকা পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথা হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বলেন, শিক্ষকরা লন্ডন চলে যাওয়ায় সংকটের প্রভাব পড়েছে। ডেপুটেশনে শিক্ষক দিয়ে কোন রকমে পাঠদান চলছে।
ফিরে দেখা জগন্নাথপুর
শিক্ষক সংকট যেন জগন্নাথপুরবাসীর পিছু ছাড়তে চাইছে না। এক সময় জগন্নাথপুরে শিক্ষিত লোকের হার কম থাকায় বহিরাগত শিক্ষকরা নানা কৌশলে জগন্নাথপুরের বাসিন্দা সেজে সরকারি চাকুরি নিতেন। কিছুদিন পর আবার বদলি হয়ে নিজ এলাকায় চলে যেতেন। ফলে জগন্নাথপুরের শুন্যপদ শুন্যই থেকে যেতো।
তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত বাড়তে থাকে জগন্নাথপুরে শিক্ষিত লোকের হার। এক পর্যায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বহিরাগতদের সরিয়ে স্থানীয় শিক্ষিত লোকেরা নিজ অধিকার আদায় করে সরকারি চাকুরি ভাগিয়ে নেন। ফলে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে জগন্নাথপুরে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়নি। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে লন্ডন যাওয়ার হিড়িক পড়ায় আবারো জগন্নাথপুরে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। যা কোন অবস্থায় কাম্য নয়। এমন অভিমত সচেতন মহলের।