সিলেটে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাট্টা আ’লীগের মনোনয়বঞ্চিতরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০:৪৩ অপরাহ্ন
অনেকে হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, কিনলেন মনোনয়ন
এ টি এম তুরাব :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের চার জেলায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৯ জনের এই তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক বড় নেতাও। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতারা। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। শুধু তাই নয়, অনেক আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলেছেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। যেসব আসনে বঞ্চিতদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি সেসব আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে একাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন নৌকার মাঝিরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু সিলেট জেলা পরে বিভাগের অপর তিন জেলার আলোচিত ৭ আসনে এবার বাদ পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যরা (এমপি)। নানা কারণে প্রভাবশালী এসব নেতারা দলীয় মনোনয়ন পাননি। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার দুইটি আসনে, সুনামগঞ্জ জেলার ৩টি এবং হবিগঞ্জ জেলার ২টি আসন রয়েছে।
এদিকে দলীয় সভানেত্রীর প্রার্থী উন্মুক্ত করার ঘোষণার সুযোগে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ আসনেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। তারা অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কেউ কেউ নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন। ফলে বেকায়দায় রয়েছেন নৌকার মাঝিরা।
সিলেট জেলার ৬টি আসনের পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে সিলেট-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এবারও এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী। গতকালও আসনটিতে বিদ্রোহী কোন প্রার্থীর নাম শুনা যায়নি।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ একাংশ) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রভারশালী নেতা। তারা হলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুর রকিব মন্টু।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানিগঞ্জ) আসনে এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনটিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবীর। এরমধ্যে গত মঙ্গলবার তিনি নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এই আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন মনোনয়ন বঞ্চিত কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন।
বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয় নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের সকলেরই কথাবর্তার সুর মিলেছে একই। জানান, গত ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে যেসব সংসদ সদস্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন, সর্বক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও বিভেদের দেয়াল তৈরি করেছেন। তার শোধ নিতেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা হচ্ছেন বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িতরা। এতে নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-৬ আসনে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও তার অনুসারীরা। কিন্তু দল তাকে মনোনীত করেনি। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর সিলেট নগরীর শেখঘাট বাসায় তার অনুসারীরা জমায়েত হন। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সভা চলে। পরে ওই সভায় মধ্যরাতে অনুসারীদের চাপের মুখে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য মতপ্রকাশ করেন।
সরওয়ার হোসেন বলেন, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে নির্বাচন করতে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে। এলাকার সাধারণ মানুষ চায় নতুন কেউ এমপি হোক। এ কারণে মানুষের চাওয়া পূরণ করতেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত স্বতন্ত্রভাবে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে।