চাল-আটা-ময়দায় অস্থিরতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২০:২৪ অপরাহ্ন
চিনি নিয়ে ‘ছিনিমিনি’ চলছেই
জালালাবাদ রিপোর্ট: মাংস ও শাক-সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও অস্থিরতা বাড়ছে চাল-আটা-ময়দার বাজারে। অব্যাহত আছে চিনির দাম নিয়ে দীর্ঘদিনের ‘ছিনিমিনি’। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন।
শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা আটা হচ্ছে কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর প্যাকেট আটার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ এবং প্যাকেট আটা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েক মাস আগে কেজিতে আরও ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুললেও সু-খবর নেই চালের বাজারে। খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম আগের মতেই ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একটু চিকন চাল মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা। প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজেরশাইল চাল। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে কেজিতে ২-৩ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব চাল।
এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম তো দূরের কথা চড়া দাম দিয়েও মিলছে না চিনি। খোলা চিনির জন্য ১৩০ আর প্যাকেটজাত প্রতি কেজির জন্য সরকার নির্ধারিত দাম ১৩৫ টাকা। কিন্তু সিলেটের খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। প্যাকেটজাত লাল চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। কোথাও মিললে তার জন্য গুনতে হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা।
নগরীর রিকাবীবাজার এলাকার এক মুদি দোকানি বলেন, কয়েক দিন ধরেই দোকানে চিনি রাখি না। দাম এখন বেশি, লাভ কম। কাস্টমারের সাথে শুধু ঝামেলা হয়। তাই চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি।
চিনির দাম নিয়ে দুই দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আপাতত চিনির দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ চিনি আমদানি কর কমাতে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে তা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া দেশি চিনির উৎপাদন নেই এবং ভারতীয় চিনি আমদানিও বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে প্রায় আগের দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। আমদানী করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা। এছাড়াও পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০-২১০ টাকা। নতুন আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা কেজি।
এদিকে স্বস্তির বাজারে ক্রেতাদের টানছে গরুর মাংস। নগরীর কিছু দোকানে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও অধিকাংশ দোকানে আগের দামে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।গরুর মাংসের পাশাপাশি দাম কমেছে মুরগির। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাদা ও বাদামি রঙের ডিমের ডজন পাওয়া যাচ্ছে যথাক্রমে ১১০ ও ১২০ টাকার মধ্যে।
বাজারে এখন মাছের সরবরাহ ভালো। তাছাড়া মাংসের দাম কমার প্রভাবও পড়েছে মাছের দামে। বেশি কমেছে চাষের মাছে। মাঝারি মানের চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। বড় আকারের চাষের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর মান ও আকারভেদে চাষের রুই মাছের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। তবে চিংড়ির দাম তেমন কমেনি। প্রতি কেজি কিনতে এখনও গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২টাকা করে নির্ধারণ করা হয় সেই সময়, যখন বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকা ছিল। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথম ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমে এখন প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকায় নেমেছে।
পাড়া মহল্লার দোকান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১২০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকা পিস। পাইকারিতে দরদাম করে ১১৫ টাকাও কেনা যাচ্ছে। তবে পাড়া মহল্লার একদম খুচরা দোকানে এখনো বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন আব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, গত একমাসে বাজারে ডিমের দাম সাড়ে ২১ শতাংশ কমেছে। গত মাসে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা এখন ৩৭ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।