ঢাকায় কমলেও সিলেটে নাগালের বাইরে মাংসের দাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:৫৯:৫৬ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে মোরগ ও গরুর মাংস। গত এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অনেকটাই কম দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। কোথাও কোথাও হাঁক-ডাক করে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। রাজধানীতে কমলেও সিলেটে এখনো আগের দামে ৭২০-৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মাংস। এজন্য বাজারের মন্দা পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন মাংস বিক্রেতারা। এরপরও মাংস ব্যবসায়ী সমিতি চাইলে দাম পূণর্নির্ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে মাংস বিক্রি বাড়বে বলেও জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ মাস ধরে অনেকটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে ৬০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস। এতে ক্রেতাদের লাইন ধরে মাংস কিনতে দেখা গেছে। যদিও খোদ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এখনো মাংসের দামের ভিন্নতা রয়েছে। কোথাও ৬০০ টাকা আবার কোথাও দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। একেক বাজারে গরুর মাংসের একেক রকম দাম নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা। একইসঙ্গে ঢাকার বাজারে মাংসের দাম কম এমনটি শুনে সিলেটের স্থানীয় বাজার নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জনসাধারণের প্রশ্ন, কোথাও যদি একই মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হন, তাহলে অন্যান্য স্থানে কেন ৭০০ টাকার বেশি হবে?
শুক্রবার নগরীর মদীনা মার্কেট, রিকাবীবাজার, আম্বরখানা, বন্দরবাজার ও শিবগঞ্জ-মিরাবাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। তবে যেসব এলাকায় গরুর মাংসের দাম কম, সেসব এলাকার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। শুক্রবার মদীনা মার্কেট এলাকার কয়েক ব্যবসায়ী ৬৫০ টাকা কেজি ধরে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন। এতে ঐসব দোকানে কম দামে মাংস কিনতে ক্রেতারা ভীড় করেন। তবে নগরীর অন্যান্য বাজারে আগের দামে অর্থাৎ ৭৫০ টাকায় মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। কেউ একটু বেশী পরিমাণ মাংস কিনলে ৭০০-৭২০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন বলে কয়েকজন বিক্রেতা জানিয়েছেন। মাংসের দাম নির্ধারণে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির সমন্বিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে জানান তারা। গরুর মাংসের দাম কমলে বাজারে ক্রেতা বাড়বে বলেও আশ^স্ত হন একাধিক মাংস ব্যবসায়ী।
প্রসঙ্গত, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপন্ন হয়। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম বেশি ছিল। কিন্তু মানুষ গরুর মাংস কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের (২০২২ সালের) ২৯ মার্চ এক বৈঠকে নগরীতে গরু, ছাগল ও খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় সিসিক। এতে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, ছাগলের মাংস ৭৫০ এবং খাসির মাংস ৮৫০ টাকায় বিক্রি করতে জানানো হয় ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সিসিকের নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানান ব্যবসায়ীরা। প্রতিবাদে গত বছরের ৭ এপ্রিল থেকে মাংস বিক্রিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন ব্যবসায়ীগণ। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ক্রেতা ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে ১০ এপ্রিল রাতে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে নগরীর মাংস ব্যবসায়ীগণ জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দাম বাড়ানোর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ১১ এপ্রিল থেকে নগরীতে ফের মাংস বিক্রি শুরু করেন তারা। ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মূখে তখন নগরীতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাংসের দাম কেজিতে বাড়ানো হয় ৫০ টাকা। তবে এই অবস্থাও খুব বেশীদিন যায়নি, এরমধ্যে নগরীর মাংস ব্যবসায়ীদের সিসিকের সাথে কোন সভাও হয়নি। এরপরও নগরীতে কয়েক মাস ধরে গরুর মাংস ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে রমজানকে সামনে রেখে ফের মাংসের দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা। উপস্থিত সিসিক কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গরুর মাংসের দাম ৭২০ টাকা, খাসির মাংসের দাম ৯৫০ টাকা, ভেড়ার খাসির মাংসের দাম ৯০০ টাকা, মহিষের মাংসের দাম ৬০০ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হয়।
এরপর থেকে ৮মাস পেরিয়ে গেলেও মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে সিসিকের কোন বৈঠক হয়নি। শীঘ্রই মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। তিনি শনিবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সামনে সিসিকের নতুন পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরপর থেকে বিভিন্ন এজেন্ডা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হবে। তখন মাংসের দামের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিমা ইয়াসমিনের মোবাইল নাম্বারে একাধিকার কল দিলেও কেউ রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সিলেটের মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘মহানগর মাংস ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি’র ত্রি বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এক প্রার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমবায় অধিদপ্তর কমিটির নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে ১২০ দিন পর নতুন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দেয়। সমবায় থেকে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে এডহক কমিটির সদস্য মুবারক হোসাইনের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নগরীর লালাবাজারস্থ মারুফ মিটশপের স্বত্তাধিকারী মো: আল আমীন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাংসের দাম কমছে। আমরা চাইলে সিলেটে মাংসের দাম কমাতে পারি। এজন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও ব্যবসায়ী সমিতির সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাংসের দাম কমানো যায়না। সমিতির কার্যক্রম স্থগিত থাকায় নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছেনা। এরপরও এ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলছি। দেখা যাক কি হয়।
এ ব্যাপারে ‘মহানগর মাংস ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর লালবাজারস্থ শুভেচ্ছা মিটশপের স্বত্তাধিকারী শেখ আব্দুল খালিক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরাও চাই সিলেটে মাংসের দাম কমানো হোক। কিন্তু সমিতির কার্যক্রম স্থগিত থাকায় নতুন করে দাম নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই এখনো আগের দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ স্ব উদ্যোগে কম দামে মাংস বিক্রি করছেন। সমিতি নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলে সবাই এক দামে মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. মারুফ হাসান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সরকার ঢাকার জন্য গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছে। সিলেটে মাংসের দাম নির্ধারণ করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর মাংসের দাম পূণনির্ধারণ বৈঠকে আমাদেরকে পরামর্শের জন্য ডাকা হয়। আমরা গৃহপালিত পশুর উৎপাদন খরচের সাথে দামের সমন্বয় করে একটা পরামর্শ দিয়ে থাকি। সিটি কর্পোরেশন ও মাংস ব্যবসায়ীরা মিলেই দাম নির্ধারণ করে থাকেন।