যুদ্ধ বিরতি শেষে আবার জ্বলছে গাজা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:২৯:০৮ অপরাহ্ন
# ২৪ ঘন্টায় ৭০০ ফিলিস্তিনি হত্যা # থামছেনা ইসরায়েলী বর্বরতা
জালালাবাদ রিপোর্ট : আবারও জ্বলছে গাজা স্ট্রিপ। কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে উত্তর থেকে দক্ষিণে। সবচেয়ে বেশি হামলা চলেছে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে। যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ফের বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ৭ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে ছয় হাজারের বেশি শিশু এবং চার হাজারের বেশি নারী রয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পর তিন দিন ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল শান্তিচুক্তি ভেঙেছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় দোহায় রোববার ফের শান্তি-আলোচনায় বসেছিল হামাস-ইসরায়েল। কিন্তু তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের হয়ে এ ধরনের বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলো তাদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কর্তারা।
জানা গেছে, তাঁদের দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে ইসরায়েল জানিয়েছে, বৈঠকে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এ অবস্থায় কাতার ব্রিটেনের সঙ্গে বৈঠক করেছে গতকাল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। যদিও এই মুহূর্তে যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই।
ইসরায়েলের নির্দেশে উত্তর ও মধ্য গাজা স্ট্রিপ ফাঁকা করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ দক্ষিণে চলে গেছেন। এখন সেখানে কমপক্ষে ২৩ লক্ষ মানুষের বাস। অথচ এখন দক্ষিণকেই পাখির চোখ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণ গাজা স্ট্রিপে লিফলেট ছড়ানো শুরু করেছে তারা। বার্তা দিচ্ছে এলাকা ফাঁকা করে দিতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ, তার উত্তর নেই।
কূটনীতিকরা বলছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর পূর্বসুরি গোল্দা মেহিরের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চায়। তাঁর বার্তা, শুধু দেশ নয়, গোটা মহাদেশের যে কোনও কোণায়, যেখানে যত ইসরায়েলের শত্রু রয়েছে, তাদের শেষ করতে হবে। একটি আমেরিকান দৈনিকে লেখা হয়েছে, নেতানিয়াহু এই মর্মে তাঁদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদকে নির্দেশও দিয়েছে। মোসাদ সেই ছক কষতেও শুরু করেছে। তুরস্ক, লেবানন, কাতারের বিভিন্ন শহরে হামাসের অফিস রয়েছে। পরিকল্পনা যেখানে যত হামাসের বড় মাপের মাথা রয়েছে, সকলকে শেষ করা হবে। কাতারে হামাসের দফতর খোলা হয়েছিল ২০১২ সালে। তাদের এক কর্তা জানিয়েছে, আমেরিকার অনুরোধে দফতরটি খোলা হয়েছিল। তারা সমন্বয়ের পথ খুঁজছিল। এখন সেই দফতর ইসরায়েল ও আমেরিকার নিশানায়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময়ে সেনাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সাজানোও হয়েছে বাহিনী। আমেরিকা বাঙ্কার ধ্বংস করার জন্য বিশেষ ধরনের বোমা পাঠিয়েছে। হামাসের গোপন ঘাঁটি ভাঙতে এগুলি ব্যবহার করা হবে। অন্তত ১৫ হাজার বোমা ও ৫৭ হাজার গোলা পাঠিয়েছে আমেরিকা। এর মধ্যে রয়েছে ‘১০০বিএলইউ-১০৯ বাঙ্কার বাস্টার বোম্ব’। প্রতিটির ওজন ২০০০ পাউন্ড।
এদিকে, ইসরায়েলের বর্বরতার মাঝে আজ মঙ্গলবার কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (জিসিসি)-এর শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে গাজা যুদ্ধ আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোববার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন সপ্তাহ আগে জিসিসির সম্মেলন মিলিত হয়েছিলেন আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা। সেখানে বৈঠক শেষে তারা গাজা যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছিল। তবে এবার আরব বিশ্বের লোকেরা আশা করছে, জিসিসিভুক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক শেষে আরো শক্তিশালী অবস্থান নেবে।
আলজাজিরার প্রতিবেদক আহেলবারা দোহা থেকে জানিয়েছেন, এবার জিসিসি নেতারা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছেন। তাই আশা করা হচ্ছে, তারা গাজা সম্পর্কে জোরালো কোনো বিবৃতি দেবে।