ভূমি অবক্ষয়ে হ্রাস পাচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:০৭:৩০ অপরাহ্ন
#বেশি ঝুঁকিতে সিলেট অববাহিকা ও সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমি
জালালাবাদ রিপোর্ট : বছর ঘুরে আবার পালিত হলো বিশ^ মৃত্তিকা দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য মাটি ও পানি : জীবনের উৎস। কিন্তু এমন এক সময় দিবসটি পালিত হলো, যখন সারা দেশে ভূমির ওপর চাপ বাড়ছে। একদিকে মাটির স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে কমে আসছে কৃষিজমির পরিমাণ। সরকারি হিসাব বলছে, প্রতিবছর গড়ে ২৭ হাজার হেক্টর ভূমির অবক্ষয় হচ্ছে। এতে প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশের ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর ভূমি অবক্ষয়ের শিকার। এটি দেশের মোট ভূমির ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ।ভূমি অবক্ষয়ের (ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন) কারণ মূলত পাঁচটি-মাটির রাসায়নিক গুণের অবনতি, ভূমি ক্ষয়, পানির স্তর নেমে যাওয়া ও খরা, জলাবদ্ধতা ও মাটি জমাট বাঁধা এবং প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাস। সরকারের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশের ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর ভূমি অবক্ষয়ের শিকার। এটি দেশের মোট ভূমির ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের অনেক অঞ্চলে ফসলের মাঠ খালি পড়ে থাকে না। মাটির বিশ্রাম নেই। একটি ফসল উঠলেই অন্য ফসলের চাষ করা হচ্ছে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতি ব্যবহারে মাটি নিঃস্ব, দুর্বল, রোগগ্রস্ত। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মাটি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে বড় ধরনের উদ্যোগ জরুরি।মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর। সেদিন ছিল বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। বাংলাদেশের ভূমি অবক্ষয়ের প্রকৃতি, কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি জানা এবং করণীয় নির্ধারণের জন্য এই গবেষণা করা হয়েছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেশে ভূমিক্ষয়ের তিন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে—পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ক্ষয়, নদীভাঙন এবং বালুর ঢল।প্রাকৃতিক কারণে পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ক্ষয় হয়। কিন্তু পাহাড়ি এলাকার বন ধ্বংস, আদা ও আনারসের চাষ অতিমাত্রায় ভূমি ক্ষয়ের কারণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ হেক্টর।
নদীভাঙন দেশের ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণ। সারা দেশের ছোট–বড় অনেক নদীতে ভাঙন লেগেই আছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি প্রতিবছর নদীতে বিলীন হয়। বেশি ভূমি ক্ষয় হয় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, দুধকুমার ও তিস্তা নদীতে।পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ বৃষ্টিতে ঢল নামে। এই ঢলে মাটি, বিশেষ করে বেলে মাটি পাহাড়ের আশপাশ এলাকায় এসে পড়ে। এই ঢলও মাটির মান কমিয়ে দিচ্ছে।
মাটির অবক্ষয়ের কারণে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিতে পড়ে। এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, জীবজন্তু বা গাছপালার টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এটা হচ্ছে মূলত ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন, কোনো কোনো প্রজাতির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ, জলবায়ুর পরিবর্তন, দূষণ এবং আগ্রাসী প্রজাতির প্রবর্তন।মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৪ শতাংশ এলাকায় প্রাণবৈচিত্র্যের অবক্ষয় ঘটছে। যেসব এলাকায় এই ঝুঁকি বেশি দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে আছে সিলেট অববাহিকা, সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবনভূমি, সুন্দরবন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।