সিলেটে পেঁয়াজ নিয়ে তুলকালাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ৮:৩৮:০৮ অপরাহ্ন
* ২৪ ঘন্টায় দাম ২৪০, প্রশাসনের অভিযান *
* সীমিত জনবলে অসহায়ত্ব ভোক্তা অধিকারের *
স্টাফ রিপোর্টার : ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার ২৪ ঘন্টা না পেরোতেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে সিলেটের পেঁয়াজের বাজার। ১১০ টাকার পেঁয়াজের কেজি ডাবল সেঞ্চুরী পার করেছে। পেঁয়াজ নিয়ে সিলেটে রীতিমত তুলকালাম চলছে।
একদিনের ব্যবধানে সিলেটে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখন পেঁয়াজের কেজি ২০০-২৪০ টাকা। আর ভারতীয় পেয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেউ কেউ তা আবার ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন। হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
এদিকে হঠাৎ পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তবে সীমিত জনবলের কারণে বিশাল বাজার নিয়ন্ত্রণে তারাও অসহায়।
অভিযান চলাকালে পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করলেও অভিযান শেষ হতে না হতেই ফের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এ যেন ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের চোর পুলিশ খেলা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় শনিবার দুপুরে কালিঘাটে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা কৃষি বিপণণ অফিস। বেলা ১টার দিকে শুরু হয়ে অভিযানটি আড়াইটার দিকে শেষ হয়। অভিযানে কালিঘাটের অধিকাংশ পাইকারী দোকানে ক্রয় রশিদ পরীক্ষা করলেও মাত্র ১টি দোকান ১৫৫ টাকা কেজিতে ঢাকার শ্যামবাজার থেকে কেনার রশিদ দেখাতে পেরেছে। এছাড়া আর কোন দোকানই বর্ধিতমূল্যের বিপরীতে রশিদ দেখাতে পারেনি। ফলে অভিযানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আগের দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়। সব পাইকারী দোকানদারদের সতর্ক করা হয়। অভিযান চলাকালে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে কালিঘাটে ১টি ও সোবহানীঘাটে ২ টি দোকানকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ হুমায়ুন কবির।
এদিকে ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিপণণ অফিসের অভিযান চলাকালে কালিঘাটে পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে অভিযান শেষ হতে না হতেই ফের বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এক লাফে পাইকারী বিক্রি দাঁড়ায় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। পাড়া মহল্লার দোকানে পেঁয়াজের কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফের পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর অভিযানে নামে সিলেটের জেলা প্রশাসন। সিলেটের জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মেরিনা দেবনাথের নেতৃত্বে সন্ধ্যা ৬টা থেকে নগরীর কালিঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে অংশ নেয়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবুল সালেহ মোঃ হুমায়ুন কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান পরিচালিত হয়। সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হয় এবং আগের কেনা পেয়াজ আগের দামে বিক্রি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ দোকানে পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেছে। নতুন কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে ক্রয় রশিদ প্রদর্শনের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদেরকে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন রোববার সকালে বেপারীদের সাথে তাদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ এবং নিয়ন্ত্রণে করনীয় নির্ধারণ করা হবে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক ফখরুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর শুনে নগরীর প্রধান পাইকারী বাজার খ্যাত কালিঘাটে আমাদের টীম অভিযান চালিয়েছে। অভিযান চলাকালে দাম কমলেও শেষ হতে না হতেই আবার বেশী দামে বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে বৃহত্তর সিলেটের পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং কঠিন হয়ে পড়েছে। এরপরও আমাদের ভোক্তার টীম সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়ে রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকেও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সকালে নগরীর কালীঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে ১০০ টাকা পাইকারি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। অনেকেই আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে খুচরা দোকানেও হু হু করে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারের কোথাও কোথাও ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীঘাটের এক ব্যবসায়ী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর থেকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রকারবেদে ১০০/১০২ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে ভারতের একটি সিদ্ধান্ত শুক্রবার প্রকাশ পাওয়ার পরপরই অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ৎদাররা কিংবা অন্যান্য কালীঘাটের ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজের প্রচুর মজুদ রয়েছে। কিন্তু ভারতের একটি সংবাদ শোনার পরপরই রাতারাতি কাঁচা টাকা উপার্জন করতে তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলারে বেঁধে দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর আদেশ জারি করেছিল ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে সে সময় জানানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোয় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলারে বহাল থাকছে বলে জানায় ভারত সরকার।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের দপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে।
এদিকে বাংলাদেশের স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ বছরের অধিকাংশ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে। তবে মওসুমের শেষ দিকে এসে দাম বেড়ে গেলে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার।
চলতি বছরের জুন মাসেও পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উঠে গেলে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। ৮ ডিসেম্বর এ আদেশ জারি করে দেশটির সরকার। এদিন বিকেলে বাংলাদেশের বাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাতেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ১৮০-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। রাত পোহাতেই তা আরও এক দফা বাড়ে।