সুনামগঞ্জে প্রচারনায় নেই ডামি প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ৬:০৯:৪৬ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে জেলার পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় ৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হলেও ডামি প্রার্থীদের দেখা মিলছেনা। কোন কোন প্রার্থীকে স্বশরীরে ভোটের মাঠে এখনো দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব প্রার্থী সমর্থকদের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। সুনামগঞ্জ-৩ (শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর), সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর বিশ্বম্ভরপুর) আসনে অবশ্য আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে জাপা’র ও তৃণমূল বিএনপির দুইজন প্রার্থী প্রচারণায় আছেন। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে না থাকলে, তিনটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন সরকার দলীয় প্রার্থীরা।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. রঞ্জিত সরকার। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়বেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ। এই তিনজনই ভোটের মাঠে সক্রিয়।
এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল মন্নান তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির মো. আশরাফ আলী, গণফ্রণ্ট’র মো. জাহানুর রশিদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. হারিছ মিয়া। এই ড্যামি প্রার্থীদের এখনো ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। কারো কারো ফোনই বন্ধ। এই আসনের ভোটারদের কাছে পরিচিত সাবেক বিএনপি নেতা বিকল্প ধারা’র রফিকুল ইসলাম চৌধুরী’র ফোন বন্ধ থাকায় তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন কী না জানা যায় নি। জাতীয় পার্টির আব্দুল মান্নান তালুকদার বললেন, তিনি প্রচারণায় আছেন। দল নির্বাচনে থাকলে, তিনি দলের প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়বেন।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত মরহুম জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। এই দুই প্রার্থীর প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচন। এই আসনে একমাত্র ডামি প্রার্থী গণতন্ত্রী পার্টির নেতা অধ্যক্ষ মিহির রঞ্জন দাস। তিনি এখনো প্রার্থীতার কথা নিজের গ্রাম শাল্লার রহমতপুর নোয়াগাঁওবাসীকে জানাননি বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক বাসিন্দা।
মিহির রঞ্জন দাস বললেন, আমাদের দলের সভাপতি সিলেটের ব্যারিস্টার আরশ আলী। তিনি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে সিলেটে আমাদের সভা হবে। এই সভায় সিদ্ধান্ত হবে আমরা ভোটে থাকবো কী-না। এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। একসময়ের জমিয়ত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা অ্যাড. শাহীনুর পাশা এবার তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী হয়েছেন এখানে। ভোটের মাঠেও রয়েছেন এই দুই প্রার্থীই। এখানে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির তালুকদার মো. মকবুল হোসেন, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী ও জাকের পার্টির মো. নজরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। সোমবার পর্যন্ত এসব প্রার্থীদের ভোটের মাঠে দেখেননি এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাবেক শিক্ষা সচিব, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। নির্বাচনী এলাকাজুড়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর উঠোন বৈঠকসহ নানা প্রচারণা জোরেশোরে চলছে। জাপা’র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্, বিএনএম’র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামছুল আবেদীনও আছেন প্রচারণায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন মনোনয়ন দাখিলের পর কয়েকটি উঠোন বৈঠক করেছিলেন। এরপর আর দেখা যায়নি তাঁকে। তিনি অবশ্য মনোনয়ন দাখিলের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আসনটি জোটের কোন শরীককে ছাড়লেই, কেবল ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন তিনি। জাসদের আবু তাহের মো. রুহুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)’র মোহাম্মদ দিলোয়ার এখনো প্রচারণা শুরু করেন নি।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চারবারের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তার সঙ্গে ভোটে লড়তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম চৌধুরী। নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ তৈরি হয়েছে দলের এই দুই প্রার্থীর প্রচারণায়ই। অবশ্য নামেমাত্র প্রচারণায় আছেন জাতীয় পার্টির অ্যাড. নাজমুল হুদা ও গণফোরামের আইয়ূব করম আলী। এছাড়া এই আসনের অন্য প্রার্থী জাকের পার্টির শেখ ইয়াকুব আলী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)’র মো. আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)’র আবু সালেহ ও ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির (এনপিপি)’র আজিজুল হককে ভোটের মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই আসনের গণফোরামের প্রার্থী আইয়ূব করম আলী বললেন, ভোটের প্রচারণা আমি আমার মত করছি। প্রতিদিন দুটি উঠোন বৈঠক করছি। কিছু গণসংযোগও করছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ বললেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছি না।