ব্যবসায়ীদের সাথে জেলা প্রশাসনের বৈঠক : সিলেটে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:০১:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সিলেটে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। অভিযানের পাশাপাশি সিলেটের পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। সেই বৈঠকে পেঁয়াজের যৌক্তিক দাম নির্ধারণের জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠক থেকে উঠে ব্যবসায়ীরা নিজেরা আবার বৈঠক করে এলসি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি পাইকারী দাম নির্ধারণ করে সেই সিদ্ধান্তের কথা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টা সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে শুক্রবার থেকে সিলেটে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। অসাধু ব্যবসায়ীরা একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০-১৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এ নিয়ে ক্রেতা পর্যায়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বাজার মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপরও নিয়ন্ত্রণ হয়নি পেঁয়াজের দাম। এ অবস্থায় সিলেটে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করতে জরুরী বৈঠক আহ্বান করে জেলা প্রশাসন।
সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পুলিশ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কর্তকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সোমবার বিকেলের মধ্যে সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসনকে অবগত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত দামে সিলেট পেয়াঁজ বিক্রি না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। এমন করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
এদিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বের হয়ে জরুরী বৈঠকে বসেন সিলেটের পাইকারী ব্যবসায়ীগণ। সেই বৈঠকে তারা প্রতিকেজি এলসি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকা পাইকারী দাম নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী মূল্যতালিকা টানানো হয়েছে। একই সাথে খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিকেজি এলসি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা ও দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশন দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. হুমায়ূন কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন- জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের নির্দেশ প্রদান করা হয়। তারাও এ বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- সোমবার বিকেলের মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপাড়া করে যৌক্তি বিক্রয়মূল্য আমাদের জানানোর কথা রয়েছে। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয় যাচাই করে দাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা একটি দাম নির্ধারণ করে আমাদেরকে জানিয়েছেন। এই মূল্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বৈঠকে পাইকারী ব্যবসায়ীদেরকে একজন খুচরা বিক্রেতার কাছে ১ বস্তার বেশী পেঁয়াজ বিক্রি না করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া খুচরা বিক্রেতাদের একজন ক্রেতার কাছে ২ কেজির বেশী পেঁয়াজ বিক্রি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর ব্যপারেও পাইকারী ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন- সিলেটের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের তদারকি অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক দামে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার দিনভর নগরীতে জেলা প্রশাসনের ৪টি পৃথক টীম পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করেছে। সকল ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে জরিমানার হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে সিলেটে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খুচরো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। খুচরো বিক্রেতারা বলছেন- আড়তদারদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে কিনছেন বলেই বেশি দামে বিক্রি করছেন। এমন ভোগান্তি নিরসনে অনায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রয়কারী আড়তদারদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি ভোক্তাসাধরণের।
জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুয়েকদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তাই সকল ক্রেতাদেরকে অতিরিক্ত পেঁয়াজ ক্রয় করার অনুরোধ জানান তারা।