নির্বাচনে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি ২৬ আসনে আ’লীগের সাথে সমঝোতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৭:৪৯:৫০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : নানান নাটকীয়তার পর অবশেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় এ কথা জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন, সরকারের আশ্বাসে ও কার্যক্রমে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তাই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ২৮৩ আসনে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি, নির্বাচন বর্জন করবে না। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অর্থবহ হয় সেই লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান মুজিবুল হক চুন্নু। রোববার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার শেষ দিন। এদিন সকালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে কি না তা নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে সংশয় ছিল।
এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়ে নির্বাচনে আসা নিয়ে অনেকটা অনিশ্চিয়তার দিকে ধাবিত হয়েছিল জাতীয় পার্টি। তবে শেষ পর্যন্ত ২৬ আসন দিয়ে জাপাকে ভোটে ফেরাতে সক্ষম হয়েছে আ’লীগ। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি এবং ১৪ দলের শরিকদের ৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে তারা।
নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ৩২ আসনে তাদের প্রার্থী থাকছে না। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি নিয়ে যান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
পরে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দলের শরিকেরা নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নেবেন। আর জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলগত ও জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করবে মর্মে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছিল। উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক কিংবা তাদের স্ব স্ব দলের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে এবং এ বিষয়টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। এমতাবস্থায় নিম্নউক্ত আসনগুলোতে জোটের প্রার্থী থাকার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হলো।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
যেসব আসনে সমঝোতা: জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয়েছে ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-১ ও ২, গাইবান্ধা-১ ও ২, বগুড়া-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ- ৫ ও ৮, কিশোরগঞ্জ-৩, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ফেনী-৩, চট্টগ্রাম-৫ ও ৮ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। এর মধ্যে নানায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।
১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাসদ তিনটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। তাদের জন্য বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা বর্জন যে সিদ্ধান্তই আসুক এটা জাপার রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম কঠিন সিদ্ধান্ত। জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের দলে যেমন প্রভাব ছিল তার ছোট ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের তা নেই। নির্বাচনে অংশ না নিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে যে অদৃশ্য চাপ আসবে তা জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের কীভাবে মোকাবিলা করবেন সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে নির্বাচনে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করেন তিনি।