হাকালুকি হাওরের মৎস্য অভয়াশ্রমে হরিলুট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ৫:৪৫:০৩ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকির ৮টি অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুটের মহোৎসব চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বিলগুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়েছে। এদিকে, হরিলুট আর লুটপাটের কারণে অভয়াশ্রমের কমিটি বাতিলসহ নতুন কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। মাছ লুটের পরও অজ্ঞাত কারণে মৎস্যখেকোদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, হাওরের কুলাউড়া উপজেলার কাংলী গোবরকুড়ি চিকনমাটি গ্রুট ফিসারী, জুড়ী উপজেলার আগদার বিল, মাইছলার ডাক ও বড়লেখা উপজেলার নিমু বিল, কৈয়ারকোনা বিল, মাইয়াজুড়ী বিল, তোকোনি বিল, কৈরের মুড়া ও কেশবডহর গ্রুপ নামের এই ৮টি বিল বিভিন্ন সংগঠনকে দেখভালের দায়িত্ব দেয় সংশ্লিষ্ট দফতর। দীর্ঘদিন যাবৎ মৎস্য লুটের কারণে পুরো হাকালুকি জুড়ে মাছের অভাব দেখা দেয়। সরকারের মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় খোদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। স্থানীয়রা বলেছেন, এক-একটি বিল থেকে প্রতি বছরে সর্বনি¤œ অন্তত ১ কোটি টাকার মাছ লুট হয়। এই হিসেবে ৮টি বিলে এক বছরে লুট হয়েছে ৮ কোটি টাকা।
জুড়ী ভ্যালি মৎস্য ফিসারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জমির আলী বলেন, সরকার অভয়াশ্রম করে যেসব সংগঠনকে বিল তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা মাছ লুটেপুটে খাচ্ছে। সেচ করে সব মাছ বিক্রি করে পকেট ভারি করছে। এছাড়াও এরা বিষটোপে অতিথি পাখিও নিধন করছে। তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব বিলে বাঁধ সংস্কার, মাছের খাদ্য নিশ্চিতসহ মাছেদের অভয় নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা তারা করেনি। বিল দেখভাল করতে একজন পাহারাদার রাখা হয়েছে। সে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
বড়লেখা উপজেলার বেলাল আহমদ বলেন, অভয়াশ্রমের মৎস্য দিনের পর দিন লুটেপুটে খাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাইছলার ডাক বিলে হরদম হরিলুট হচ্ছে। তিনি বলেন, অভয়াশ্রম পরিচালনা করার কোন টাকা আসে না। পাহারাদারের কোন বেতন দেয়া হয়না। এগুলো কাগজ-কলমে অভয়াশ্রম, বাস্তবের কোন মিল নাই।
তোকোনি বিল কৈরের মুড়া ও কেশবডহর গ্রুপের অভয়াশ্রম উন্নয়ন কমিটির সদস্য নূর হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে আগে মৎস্য লুট হতো। এখন কিছুটা কমেছে।জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আশ্রম পরিচালনাকারী সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে কমিটি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তেকোনি বিলে নতুন একটি কমিটি হয়েছে। মৎস্য লুট বন্ধ না হবার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অভিযানে গেলে মৎস্যখেকোদের পাইনা।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা নাজরাতুন নাইমা বলেন, অভয়াশ্রমগুলো এসিল্যান্ড মনিটরিং করছেন। কেউ যদি অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুট করে তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাকালুকি হাওরজুড়ে ব্যাপক মৎস্য বৃদ্ধির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কাবিলসহ হাকালুকি হাওরে ৮টি অভয়াশ্রম তৈরি হয়।