স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট দিন : সিলেটে শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:১০:০৬ অপরাহ্ন
আধুনিক সিলেট গড়ার কাজ চলছে
সিলেটে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা আছে
স্টাফ রিপোর্টার : বরাবরের মতো এবারো সিলেট থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করলেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
প্রচারণা শুরুর প্রথম নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাইলেন। বললেন, নৌকায় ভোট দিলে দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশে পরিবেশ বান্ধব দেশ, দক্ষ জনগণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন তৈরি করব। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলব।
বুধবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করে ৪টা ৫৫ মিনিটে শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী সরকারি আলিয়া মাদরাসার মাঠে সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছার পর নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান। তার বক্তব্যের আগে শীর্ষ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝে মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের এলাকায় অবস্থান করেন নেতাকর্মী। নিরাপত্তার কারণে চারপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন অনেকে। বিশেষ করে একমাত্র মাঠের পশ্চিম দিকে প্রবেশের স্থান রাখায় মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের মাঠে প্রবেশে বেগ পেতে হয়।
৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় সিলেটের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সিলটবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি বারবার সিলেটে এসেছি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সিলেটবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সুরমা নদীসহ সব নদী খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন রেলস্টেশন করে দিয়েছি। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-বাদাঘাট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় ও চার লেন হচ্ছে। ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আধুনিক সিলেট গড়ার কাজ চলছে। সিলেটে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একশ শয্যার বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেটের মানুষ সবসময় আমাদের পাশে রয়েছে। আমিও পাশে আছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতির জন্য আমরা লড়াই করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সিলেটে ১৯৮১ সালে এসে শুরু করেছিলাম নির্বাচনী প্রচার কাজ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবার নির্বাচনের আগে সিলেটে আসি। আজকেও আবার এসেছি। ১৯৫৯ সালে সিলেটে এসেছিলাম। তখন ছোট ছিলাম। তবে ১৯৮১ সালে সিলেটে আসাটা ছিল ভিন্ন। কারণ তখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে সিলেটে এসেছিলাম। তখন একটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। এ দেশে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। ৮ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিয়েছি। ২১ জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন নেই। এ সিলেটে কেউ ভূমিহীন নেই। কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। ওই নির্বাচনে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দিলো না। কেন দিলো না। দিলো না এই কারণে, বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকার কোম্পানিরা এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছি আমি গ্যাস বেচব না। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবেন না। ক্ষমতায় আসলো বিএনপি-জামায়াত জোট।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি, সেই একই জায়গায় কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না, এবার আমরা তেলও পেয়েছি। আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয়, সেটা জন বুঝেই ধন দেয়, এটা হলো বাস্তব কথা। তারা জন বুঝে দেয়, এটাই আল্লাহর কাজ। আল্লাহ জানে ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে। আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে, বলেন তিনি।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন কোথায়? কোথায় আছে? পালিয়ে গেছে। তারা বলেছিল, ২৭ অক্টোবরের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবে। এখন তারাই পালিয়ে গেছে। বিএনপিকে জনগণ লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। বিএনপি খেলায় নাই। খেলায় আছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। ৭ তারিখ তারা খেলবে।’
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রেসিডয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছো হক, সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রবাসী কল্যাণ, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, আবু জাহির এমপি, হাবিবুর রহমান এমপি, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, চলচিত্র অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ হেলালসহ অনেকে।
সিলেটের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ওসমানী বিমানবন্দর পৌঁছান। দুপুরে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। সিলেট সার্কিট হাউসে অবস্থানের পর বিকেলে সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছান। ওই সময় শিল্পীরা ‘বাবা শাহ জালালের দেশ সিলেট ভূমিরে’, ও কোন মেস্ত্ররি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়’ গান দুটি পরিবেশন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা ছিল নগরজুড়ে। সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী চৌহাট্টা মোড় থেকে আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, রিকাবি বাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশের মাজার এলাকার রাস্তাও বন্ধ রাখা হয়। নগরীর প্রত্যেক প্রবেশ মুখ থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা এবং সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন। তাদের পরনে রঙিন গেঞ্জি ও মাথায় ক্যাপ ছিল।