সুনামগঞ্জের চারটি আসনে নৌকার বিপক্ষে পাঁচ শক্তিশালী প্রার্থী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ৫:১৭:১৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের। ওই চারটি আসনের মধ্যে একটি বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ও অন্য তিনটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার সাথে টক্কর দিবেন। তবে ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবারো অনেকটা নির্ভার থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, সদর আসন হিসবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-৪ আসনটি বিগত তিনিটি নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। বিগত দুই মেয়াদে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলা জাপার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। ১০ বছর এমপি থাকাকালীন উন্নয়নের পাশাপাশি দলকে গুছিয়েছেন পীর মিসহাব। আগে থেকেই জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটিতে আরো পাকাপোক্ত হয়েছে জাপার ভিত। এমন পরিস্থিতিতে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ‘রাজনীতির বাইরের মানুষ’ অবসরপ্রাপ্ত আমলা ড. মোহাম্মদ সাদিক। অবশিষ্ট সময়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে টেনে বিরোধীদলের প্রার্থী পীর মিসবাহর সঙ্গে লড়াইয়ে কতদূর গড়াবে সেই আলোচনা এখন ভোটের মাঠে।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ছোটভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরী। কিন্তু স্বাধীনতার পর অদ্যাবধি এই আসনের ভোটের রাজনীতিতে একক প্রভাব রয়েছে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরিবারের। এখান থেকে সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুরঞ্জিত সেন। তাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন গেল দুটি নির্বাচনে এমপি হন সেনপত্নী জয়া সেনগুপ্তা।
এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকে সেন পরিবার বঞ্চিত হওয়ায় তাঁর পরিবারের অনুসারীদের চাপে ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের আসেন জয়া সেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হয়ে তাঁর আশ^াস পেয়েছেন বলে দাবি করেন জয়া। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে নৌকার প্রার্থী আল-আমিনকে।
এদিকে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন আসনটির টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তাঁর বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার। এদিকে, বিগত পাঁচ বছর ধরে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ছিলেন শ্রমিক লীগ নেতা সেলিম আহমদ। মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি রতন ও শ্রমিক নেতা সেলিম নিজ দলের প্রার্থীকে ভোটের মাঠে ছাড় না দিয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বড় শোডাউন করে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা। শেষ পর্যন্ত নিজ দলের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বাগে আনতে না পারলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে নৌকার প্রার্থীকে।
এদিকে, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে এবারো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তাঁর দুই যুগের নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিবার থেকে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী। এমপির সাথে সমান্তরাল রাজনীতি করে আসা শামীম চৌধুরী মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নিজ অনুসারী জনপ্রতিনিধি, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে মতবিনিময় করে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন শামীম। ব্যক্তিগত ইমেজ ও পারিবারিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজ দলের প্রার্থীর জন্য ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবেন ছাতক পৌরসভার মেয়রের ছোটভাই শামীম।