সালতামামি : নির্বাচনী উত্তাপ না থাকলেও উত্তাপ ছিল আদালতপাড়ায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৬:২৭:২৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩ সাল। আর মাত্র তিনদিন পর আসছে নতুন বছর ২০২৪ সাল। বছরের শেষ দিকে এসে অনেকটা উত্তাপহীন থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রে আছে জাতীয় নির্বাচন ইস্যু। নির্বাচন নিয়ে কোনো উত্তাপ না থাকলেও বছরের শেষ দিকে এসে অনেকটা উত্তাপ ছড়িয়েছে আদালতপাড়ায়। বছরের শেষ দিকে এসে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে সরগরম ছিল আদালতপাড়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতার সাজা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় রায় বেরিয়েছি। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তির মামলার রায় এসেছে চলতি বছর। বছরজুড়ে এমন কয়েকটি আলোচিত রায় নিয়ে আমাদের আজকের সালতামামি।
তারেক-জোবায়দার মামলা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এর আগে হত্যা-দুর্নীতিসহ বেশ কয়েকটি মামলায় সাজার রায় এসেছে। তবে জোবায়দা রহমানের মামলার রায় এ বছরই প্রথম। গত ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান। এ মামলা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত প্রাঙ্গণ। মামলার শুনানিতে হট্টগোল, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। রায়ের প্রায় দেড় মাস পর বিচারককে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে দুটি চিঠিও দেয়া হয়।
বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের কারাদণ্ড: বছরের শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গুটিকয়েক মামলার রায় দেয়া হয়। তবে বছরের শেষ দিকে এসে রাজনৈতিক রায়ের হিড়িক পড়ে যায় আদালতপাড়ায়। আদালত সূত্রে এখনো পর্যন্ত জানা গেছে, শতাধিক মামলায় বিএনপি-জামায়াতের দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় হত্যাচেষ্টা মামলা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় রায় হয়েছে এ বছর। ১৭ আগস্ট ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত রায়ে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, জাসাস-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়াসহ ৫ জনকে পৃথক দুই ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তির মামলার রায়ে চলতি বছর সাজা হয়েছে।
আরাভ খান: হুট করে আলোচনায় আসা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের একটি মামলায় সাজার রায় আসে এ বছর। ৯ মে অস্ত্র আইনে রমনা থানায় শ্বশুড়ের করা মামলায় তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার মেট্রো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মুর্শিদ আহাম্মদের আদালত। তার বিরুদ্ধে করা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করে। আরাভ খানের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১০ মে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ২৪ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন রবিউল। তবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালত তাঁর জামিন বাতিল করেন।
রবিউলের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যার মামলাটি বিচারাধীন। ওই মামলায় দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় নিজের পরিচয়ে আরেকজনকে আদালতে হাজির করিয়ে ছিলেন রবিউল।
ঢাকায় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মামুন ইমরান খান খুনের পর একপর্যায়ে রবিউল পালিয়ে যান। পরে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করেন। চলতি বছরের ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি সোনার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে হাজির করে আলোচনায় আসেন আরাভ।
পিকে হালদার: দেশত্যাগের পর আলোচনায় আসেন হাজার কোটি টাকা পাচারকারী গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। গত বছর তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি ভারতেই রয়েছেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে দেশে বেশ কয়েকটি মামলা করে দুদক। গত ৮ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় পৃথক দুই ধারায় তাকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালত।
ডিআইজি মিজান: গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘুষ লেনদেনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। এ বছরও এসেছে তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায়। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার আইনের মামলায় গত ২১ জুন ডিআইজি মিজানুর রহমানকে পৃথক তিন ধারায় ১৪ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম।
রিজেন্টের সাহেদ: আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গত ২১ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়।
হেলেনা জাহাঙ্গীর: পল্লবী থানায় করা প্রতারণার, চাঁদাবাজির মামলায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ ৫ জনকে গত ২০ মার্চ দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। রায়ের দিন হেলেনা জাহাঙ্গীর আদালতে হাজির হননি। এর প্রায় ৮ মাস পর ২ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন চান। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।