সিলেটে নিষিদ্ধ পলিথিন মোড়ানো পোষ্টার!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : নির্বাচনী প্রচারণায় পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও সিলেটে খোদ সরকারী দলের নৌকা প্রার্থীর পোষ্টারে সেটা ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেটের অন্যান্য স্থানেও শোভা পাচ্ছে পলিথিনে মোড়ানো পোষ্টার। এ নিয়ে ক্ষোভ পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের। তবে পলিথিন প্রচারণার বিরুদ্ধে এখনো কোন অভিযান চোখে পড়েনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থকরা। নির্বাচনের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের নজর কাড়তে জনসংযোগ-মাইকিংয়ের পাশাপাশি সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুন। এমন সরব প্রচারে লেমিনেটিং ও পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
পরিবেশের জন্য হুমকি বিবেচনায় নির্বাচনী প্রচারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) এমন নির্দেশনা দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তা বাস্তবায়নের জন্য বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রচারপত্রে প্লাস্টিকজাত বা পলিথিন ব্যবহারে বাধা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পরিবেশবান্ধব এবং একটি ‘সবুজ’ নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রমে বর্জ্য উৎপাদন কমানো বা নিরুৎসাহিতকরণ, প্রচারপত্রে প্লাস্টিকজাত বা পলিথিনের আবরণ কিংবা প্লাস্টিক ব্যানার (পিভিসি ব্যানার) ব্যবহার বন্ধকরণসহ প্রচার কাজে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অথচ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা মানছেন না সিলেটের অনেক প্রার্থীরা। নিষেধাজ্ঞা ও নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন করে প্রচারকাজে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের লেমিনেটেড (পলিথিন মোড়ানো) পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বিশেষ করে সিলেট নগরের অলিগলি এবং রাস্তায় প্রার্থীর লেমিনেটেড (পলিথিন মোড়ানো) পোস্টার এবং ব্যানার।
মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের লেমিনেটিং-পলিথিনে মোড়ানো অগণিত পোস্টার নগরীর বন্দরবাজার পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, ধোপদিঘীর পার, আম্বরখানা, নাইওরপুল, ওসমানী মেডিকেল রোড, ভাতালিয়া, মির্জাজাঙ্গালসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং রাস্তায় টাঙানো রয়েছে।মবার রাতে সরেজমিনে নগরীর ওসমানী মেডিকেল রোড এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তার উপর দিয়ে টানানো হয়েছে পলিথিন মোড়ানো নৌকা প্রার্থীর পোষ্টার। সেই সময় রাস্তা দিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান চলাচল করতে গিয়ে পোষ্টারের প্লাস্টিক সুতার সাথে আটকে যায়। এসময় রাস্তায় যানবাহন আটকে জ্যামের সৃষ্টি হয়। বাশের লাঠি দিয়ে প্লাস্টিকের সুতাটি উপরে উঠালেও কেউ সুতা ছিড়তে পারেনি। উপস্থিত এক ড্রাইভার বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পোস্টার ছিড়ে অযথা হয়রানীতে পড়তে চাইনা।
এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রাথমিক ব্যবহারের পরে ফেলে দেওয়া এ বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশ দূষণের অংশীদার হবে। এসব একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এ ছাড়া বায়ু ও পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যারা জনগণের জনপ্রতিনিধি হবেন তারাই যদি আইন না মানেন, পরিবেশ দূষণের কারণ হন, এটা খুবই দুঃখজনক।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (এসডো) সূত্রে জানা যায়, সিলেট শহরে প্রতি বছর বিভিন্ন উৎস থেকে গড়ে প্রায় কয়েক হাজার টনের ওপর লেমিনেটেড প্লাস্টিকের বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় ঢালাওভাবে নির্বাচনে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে শুরু করে এই সংসদের সাংসদরা পর্যন্ত পোস্টারে পলিথিন দিয়ে তাদের নির্বাচনী এলাকা ঢেকে ফেলছেন, যা আইনের প্রতি আইন প্রণেতাদের অবজ্ঞা প্রদর্শনের নিদর্শন।
তিনি বলেন, একজন আইন প্রণেতা হিসাবে পলিথিন ব্যবহারে কিভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয় তা এই সমস্ত প্রার্থীদের অজানা নয়। যেখানে মন্ত্রী এবং সাংসদেরা পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করে তাদের নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন সেখানে অন্যান্য সাধারণ প্রার্থীদের ব্যাপারে তো কিছু বলার সুযোগ থাকে না।
তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যেখানে এইসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। সেখানে নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেই সিলেট-১ আসনের নৌকার প্রার্থীর পলিথিন মোড়ানো পোস্টার টাঙানো রয়েছে। যা খুবই হতাশাজনক।
কিম ক্ষোভের সাথে বলেন, পরিবেশের দূষণ রোধে জনপ্রতিনিধিদের সচেতন হতে হবে। যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা আমাদের জনপ্রতিনিধি হবেন। এখন তারাই যদি পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতন না হয়, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে অসচেতন আচরণের জন্য দোষারোপ করবো?
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নির্বাচনী বিধিতে যেকোনো নির্বাচনী প্রচারে লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউ না মানা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীরা দেশের আইনপ্রণেতা হবেন। তাই তাদের এমন কাজ করা ঠিক হবেনা যাতে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনিতেই দেশে রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা কমছে। নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আরো বিশ^াসযোগ্যতা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। তাই পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিন রোধে সবাইকে কাজ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সার্বিক সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পলিথিনে পোস্টার মুড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং আচরণবিধির লঙ্ঘন। এটা নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নগর এলাকায়ও আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।