সিলেট-৫ আসন : সরে দাঁড়ালেন জাপা প্রার্থী, অভিযোগ দিয়ে প্রত্যাহার করলেন মাসুক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ৯:০৮:২৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট-৫ আসনের ভোটের মাঠের রঙ ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। পরশু সিইসি বরাবর এক অভিযোগে দেন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোরও হুমকী দেন ওই অভিযোগ পত্রে। অত:পর গতকাল তিনি অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। ওদিকে, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শাব্বীর আহমদও ‘সুষ্ঠু পরিবেশ নেই’ এমন অভিযোগ এনে গতকাল নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেন। এতে ওই আসনের ভোটের হিসেব-নিকেশ পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) রিটার্নিং অফিসার ও সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে একটি অভিযোগ পত্র দেন সিলেট-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এক প্রার্থীকে জিতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া না হলে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ারও হুমকি দেন ।
লিখিত অভিযোগে মাসুক উদ্দিন বলেন, আমার দু’টি উপজেলার নেতাকর্মী ও ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে একজন বিশেষ প্রার্থীকে পাশ করানোর উদ্দেশ্যে নীল নকশা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠার পর লক্ষ্য করলাম কেতলি মার্কার প্রতিনিধিকে গায়েবি ভোটে পাশ করানোর উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত দু’টি উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সংখ্যালঘু নেতা, দলীয় নেতাকর্মীসহ অন্তত ১০০ জনকে বিভিন্নভাবে ডেকে নেয়া হয় একটি বিশেষ জায়গায় ।
সেখানে নিয়ে বলা হয়, ‘সরকারের উপরের মহলের নির্দেশ, কেতলি প্রতীকে ভোট দিতে হবে এবং কেটলির পক্ষে কাজ করতে হবে নতুবা রক্ষা নেই। এর পর থেকে ভয়ে আমার শত শত সংখ্যালঘু ভোটার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারির ১৩জন সংখ্যালঘু নেতাকে আসামীর মত ব্যবহার করে বলেন, ‘উপরের গ্রীণ সিগনাল কেটলির পক্ষে’।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর তারিখে কানাইঘাট উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা সিলেট জজকোর্টের এপিপি এডভোকেট আব্দুস ছাত্তারকে ফোন করে যোগাযোগ করে একইভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হয়। আমি আমার সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে জানতে পারি কথিত গ্রীণ সিগনালটি সঠিক নয়। নৌকার পক্ষে এলাকায় গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ভয়ে স্থানীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় হলেও ভোটাররা আমার পক্ষে রয়েছে। সঠিক নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে প্রকৃত ফলাফল আলোর মূখ দেখলে নৌকা ডুবানোর সাধ্য কারো নেই।এ বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সার্থে জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবেন বলে জানান।
তবে মাসুক উদ্দিনের এতসব অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর ভাই ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, তারা লিখিত আবেদনটি প্রত্যাহার করেছেন। নির্বাচনের অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশ রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আসাদ উদ্দিন আহমদ দাবী করেন, একটি কুচক্রী মহল নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে। তারা সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদের কাছ থেকে কৌশলে একটি আবেদনে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। ওই আবেদনে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হয়। নির্বাচনী ব্যস্ততার সুযোগে কুচক্রী মহল এই কাজটি করেছে। যখনই বিষয়টি মাসুক উদ্দিন বুঝতে পেরেছেন তখন তিনি সাথে সাথে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করে মৌখিকভাবে আবেদনটি প্রত্যাহার করেন।
এদিকে, একই দিন ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সিলেট-৫ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় প্রার্থী শাব্বীর আহমদ। বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এই ঘোষণা দেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাব্বীর আহমদ বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সরকার এবং নির্বাচন কমিশন জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিল, কিন্তু আমরা নির্বাচনী মাঠে সেই রকম কোন পরিবেশ পাচ্ছি না, তাই নির্বাচন করা খুবই কঠিন।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবিরও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন, এমনটা জানান জাতীয় পার্টির এ প্রার্থী।শাব্বীর আহমদ আরও বলেন, আমার নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। একপর্যায়ে যখন দেখলাম সরকার দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন, নির্বাচন কমিশনে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তখন আমি বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আরও শঙ্কিত হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের কোনো দিকনির্দেশনা তিনি পাননি। নির্বাচনী পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়টি কেন্দ্রে জানালেও চেয়ারম্যান পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেন।’ তিনি ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘বহিরাগতরাই এসব পোস্টার ছেঁড়া ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি।জাপা প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও সিলেট-৫ আসনে নির্বাচনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবির (ট্রাক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি মাওলানা মো. হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলি (কেটলি), জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলম (ডাব) ও মুসলিম লীগের (বিএমএল) খায়রুল ইসলাম (হাত-পাঞ্জা)। এই আসনে ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৩২৫ জন।