নগরজুড়ে অন্যরকম নিরবতা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ৯:১৯:১৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: আজ রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগেরদিন শনিবার সিলেট নগরে ছিল অন্যরকম নিরবতা। সাধারণ দুই ঈদের সময় এধরনের নিরবতা লক্ষ করা যায়।
আগেরদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং পরদিন নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি। এই সুযোগে অনেকই শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। একদিনের জন্য কেউ আর ফিরেননি। এতে সকাল থেকেই নগরে লোকজনের আনাগোনা ছিল কম। রাস্তায় রিকশা, গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে অর্ধেকের মতো। আর মোটর সাইকেলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে অল্প কিছু মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। এসব মোটর সাইকেলের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল বিশেষ সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল না ক্রেতার চাপ। ছোটো ছোটো রেস্টুরেন্ট এবং চা স্টলগুলো সন্ধ্যার পরই বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর থেকেই রাস্তাঘাটে কমতে থাকে লোকজনের আনাগোনা। চোখে পড়েনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিও। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ভোট প্রদান নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি কেউ। সবার উত্তর ছিল কৌশলী। তবে নির্বাচন নিয়ে অন্যবারের মতো এবার যে কোনো উৎসবের আমেজ নেই মানুষের মাঝে তা ছিল স্পষ্ট।
সরেজমিন নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদীনামার্কেট, ওসমানী মেডিকেল রোড, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, তালতলা, বন্দরবাজার, সুবহানীঘাট ঘুরে দেখা যায় অনেক দোকানপাটই দুপুর একটা পর্যন্ত খুলেনি। বেশিরভাগ বিপনীবিতানগুলো ছিল বন্ধ। বিচ্ছিন্নভাবে দু একটি দোকান এসব মার্কেটে খোলা ছিল। দুপুরের পর কিছু কিছু দোকান খুললেও ক্রেতা সংকটে সন্ধ্যার পরই সাঁটার টানা শুরু করেন তারা। নগরীর জিন্দাবাজারে একটি থান কাপড়ের দোকানে কথা হয় বিক্রেতা মাসুম আহমদের সাথে। তিনি বলেন, দুপুর বারোটার পর দোকান খুলেছি। কিন্তু মানুষজন একেবারে কম। এবারের ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো কথাবার্তা দেখা যায়নি। মানুষ মনে হচ্ছে ভোটের ছুটির সুযোগে ঈদের মতো গ্রামে চলে গেছে। ফলে বিক্রিও নেই। অনেকটা ঈদের পরদিন দোকান খুললে যে পরিবেশ আমরা দেখি এখন যেন তাই দেখছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখে দোকান বন্ধ করে দেবো।
এদিকে ভোট নিয়ে বেশিরভাগ লোকই সরাসরি কোনো কথা বলছেন না। সাধারণ মানুষদের বেশ কৌশলী উত্তর দিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করায় বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন এবার নির্বাচনের সময় যে উৎসবের একটা চিত্র থাকে তার কোনোটাই দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগের দিন বিভিন্ন দলের কর্মীরা ভোটার স্লিপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের অনুরোধ করে স্লিপ দিয়ে আসেন, কিন্তু এবার তাও দেখা যায়নি। ভোট বলে যে একটা কিছু হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না। নগরীর জল্লারপারে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ফরিদ আহমদ ভোট দেবেন কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন ভোট হলে তো সবসময় ভোট দিয়েই আসছি। এবারও দেখা যাক ভোটের দিন পর্যন্ত কোথায় থাকি।
সিদ্দিক আহমদ নামে একজন জানান ভোট নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। কোনো আগ্রহও নেই। এবারের নির্বাচনে মূলত আওয়ামীলীগই নিজেরা নিজেরা ভোটাভুটি করছে। যেহেতু নিশ্চিত এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে তাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। আমরা ভোট দিলেও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে না দিলেও আসবে।
বিপ্লব আচার্য্য নামে নগরীর জামতলার এক ভোটার বলেন, আমি নৌকার সমর্থক। প্রতিবারই নির্বাচনে প্রার্থীরা আমাদের এলাকায় আসেন, গণ সংযোগ করেন, ছোটোখাটো সভাও করেন। তবে এবার এরকম কোনো কিছুই দেখিনি। নৌকার প্রার্থী কবে সিলেট আছেন নাকি ঢাকা তাও জানিনা। এবার নৌকা এমনিতেই জিতবে। তাই হয়তো এবার প্রচারণা তেমন নেই। ভোটের প্রয়োজনও আছে বলে মনে হচ্ছে না। আমার ভোটের প্রয়োজন হলে কেউ তো বলতো। যেহেতু বলেনি তাই ভোট দিতে যাবো কিনা তা পরে বিবেচনা করবো।
ভোটের আগের রাতে সবচেয়ে জমজমাট থাকে বাজার, রেস্টুরেন্ট এবং চায়ের দোকান। কিন্তু এবার দেখা গেলে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সন্ধ্যার আগে নগরীর ব্যস্ততম বন্দর বাজার দেখে মনে হলো যেন মফস্বলের কোনো গ্রামীণ বাজার। গ্রামের বাজারগুলো যেমন গোধূলির সাথে সাথে গোছগাছ শুরু করে দেয় যেন সন্ধ্যার পর দোকান লাগিয়ে বাড়িঘরে চলে যাওয়া যায় শনিবার সিলেটেও ছিল সেই চিত্র। রেস্টুরেন্টে ছিল না লোকজনের ভিড়। চায়ের স্টল ছিল ফাঁকা। বড়ো সড়ক থেকে ভেতরের দিকের বেশিরভাগ চা স্টাল সন্ধ্যার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়।
নগরীর বন্দরবাজার সিটি সুপার মার্কেটে ব্যস্ততম চায়ের স্টল বাবুল টি হাউসে বিকেলে দেখা যায় মাত্র একজন ক্রেতা চা খাচ্ছেন। সামনে বড়ো থালায় মাত্র দুটো ডালপুরি। অথচ অন্যদিন বিকেলের এই সময়টিতে এই দোকানে লোকজনের চাপে বসার সিট পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে। দোকানের সামনে চুলায় বড়ো কড়াই থেকে একের পর এক নামতে থাকে ডালপুরি, পেঁয়াজু। কিন্তু শনিবার ছিল সুনসান। দোকানের কর্মচারী সোহেল জানান, কাস্টমার নেই তাই দুপুরের পর আর নতুন কিছু করা হয়নি। বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। অল্প কিছু দোকান খোলা আছে তাই শুধু চুলায় চা চড়ানো আছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তা চলবে। তারপর দোকান বন্ধ করে দেবো। সর্বোপুরি শনিবার গোটা সিলেট জুড়ে ছিল এক অন্যরকম নিরবতা।