আওয়ামী লীগেরই নিরঙ্কুশ জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩০:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ভোটার হতাশায় শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। আর এমন অভূতপূর্ব নির্বাচনে ‘নিশ্চিত’ নিরঙ্কুশ জয় কেবল সুনিশ্চিত করলো ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ। সারাদেশেই নৌকার প্রার্থীদের জয়জয়কার। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটেছে সমঝোতার আসনে। অনেক এলাকায় স্বতন্ত্রের জয় হয়েছে।সারাদেশের মতো সিলেটের ১৯ আসনেও নৌকার আধিপত্য। তবে অনেক আলোচনার জন্ম দেয়া, কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। দলের চেয়ারপার্সন শমসের মুবিন চৌধুরীর (সিলেট-৬) শোচনীয় পরাজয় হয়েছে নৌকার নাহিদের কাছে। তৃণমূল বিএনপির আরেক প্রার্থী এমএম শাহিনেরও (মৌলভীবাজার-২) পরাজয় হয়েছে।
সিলেটে ৬টির ৫টিতে নৌকার জয় :
সিলেট জেলার সবগুলো আসনেই ফলাফলে শাসকদল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই জয় জয়কার। জেলার ছয়টি আসনের পাঁচটিতে নৌকার প্রার্থী জিতেছে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরাই। একটিতে বিজয়ী হয়েছেন আল ইসলাহ’র সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে বিপুল পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার সাথে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেননি কোন প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বি চার প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন- আবদুল বাছিত (ছড়ি), ইউসূফ আহমদ (আম), ফয়জুল হক (মিনার) ও সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব)।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৪০৫টি। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ^নাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান মুহিব ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫৩৬টি, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে ৬ হাজার ৮৩৭টি, গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ১ হাজার ৯২২টি ভোট।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান জয়ী। তিনি পেয়েছেন ৮০ হাজার ৫৫টি ভোট। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক্টর) পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৪০৫টি ভোট। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বি অপর চার প্রার্থীর সবাই জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শেখ জাহেদুর রহমান (মাসুম), ইসলামী ঐক্যাজোটের প্রার্থী মো.মইনুল ইসলাম মিনার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আফরোজ।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ জয় পেয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৭৮৭টি ভোট। তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ) পেয়েছেন ১ হাজার ২১৯টি, ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন (মিনার) পেয়েছেন ১ হাজার ১২৬টি ভোট।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী কেতলি প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৯৫টি। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৫১টি ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ড. আহমদ আল কবীর (ট্রাক) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৫৮টি। এরমধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮৯ ভোট কেন্দ্রে নাহিদ ২৭ হাজার ২৯২ এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০৩ কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন দুই উপজেলার মোট ভোট পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৪৮৮টি। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সোনালী আঁশ প্রতীকে ১০ হাজার ৯৩৬টি, লাঙ্গল প্রতীকে সেলিম উদ্দিন মোট ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৭৯টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী আতাউর রহমান আতা (ছড়ি) ১৬৮টি এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী সাদিকুর রহমান (মিনার) ৬২২ ভোট পেয়েছেন।
মৌলভীবাজারের ৪টিতেই নৌকার জয়:
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী): আমাদের বড়লেখা প্রতিনিধি আব্দুর রব জানান, মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে পঞ্চম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা গঠিত। এই দুই উপজেলার সর্বমোট ১১২ টি ভোট কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী তিনি নৌকা প্রতীকে সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৮টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন বর্জন করা জাপা প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ উদ্দিনের প্রাপ্ত ভোট ৩০৯৮টি। দুই উপজেলায় শতকরা ভোট সংগ্রহ হয়েছে ৪৪.৬৭ ভাগ।
ভোটের আগের দিন নির্বাচন বর্জন করেও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ উদ্দিনের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পড়েছে ৩০৯৮টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ময়নুল ইসরাম ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২৫২৫টি এবং তৃণমুল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ১৫৩৭টি। বড়লেখা ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নাজরাতুন নাঈম এবং জুড়ী ইউএনও ও সহকারী রির্টানিং অফিসার লুসিকান্ত হাজং রোববার রাত পৌনে ৯টায় বেসরকারীভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া): আমাদের কুলাউড়া প্রতিনিধি এম.শাকিল রশীদ চৌধুরী জানান, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ৭২ হাজার ৭শ ১৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। রোববার রাত ৮টায় উপজেলার ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের ভোট গণনার পর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
নাদেলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫শ ৫২ ভোট। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন পেয়েছেন ১১ হাজার ৪শ ৪৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মতিন (কাঁচি) পেয়েছেন ৬শ ৬৮ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল মালিক পেয়েছেন ৫শ ৬৫ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা আসলাম হোসাইন রহমানী পেয়েছেন ৩শ ৬৬ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী এনামুল হক মাহতাব পেয়েছেন ৩শ ৫ ভোট ও বিকল্পধারার প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান সিমু পেয়েছেন ১শ ৬১ ভোট।
মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর): আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আব্দুল ওদুদ জানান মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর) আসনে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান নৌকা পেয়েছেন, ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৬ ভোট, তার নিকটতম জাতীয় পার্টির মো. আলতাফুর রহমান পেয়েছেন ২৬৯৮ ভোট।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ): আমাদের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি সৈয়দ ছায়েদ আহমদ জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে মৌলভীবাজার-৪ আসনে সপ্তম বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী, টানা ছয়বারের এমপি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রোববার রাত ৮টায় জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকতা ড. ঊর্মি বিনতে সালাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার ৪-আসনে (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) মোট ১৬০টি ভোট কেন্দ্র থেকে পাওয়া ফলাফলে মো. আব্দুস শহীদ নৌকা প্রতিকে সর্বমোট ২ লক্ষ ১২ হাজার ৪৯১ টি ভোট পেয়ে টানা সাত বারের এমপি হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮৭টি কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৩ হাজার ৯৩০ টি ভোট এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় ৭৩টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ৫৬১টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের আব্দুল মুহিত হাসানি মোমবাতি প্রতিকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯০ এবং ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী মিনার প্রতিকের আনোয়ার হোসেন ৫ হাজার ৬৮টি ভোট। সর্বমোট বৈধ ভোট দুই লক্ষ ২২ হাজার ৯৫৯টি। বাতিল ভোট ৪ হাজার ৭০টি। মৌলভীবাজার-৪ আসনে মোট ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ১০১ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৩০৮ ও মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৯২ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন ছিলেন।