‘যেই লাউ, সেই কদু, এজন্য ভোটে যাই নি’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০৩:০১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: ‘ভোটের স্লিপ হাতে নিয়ে ভোট কক্ষের দরজার সামনে থেকেই ফিরে আসলেন আল আমিন। বললেন, মনকে বোঝাতে পারি নি, তাই ভোট দেইনি, একদলীয় এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে লাভ কী?’ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কোরবাননগর ইউনিয়নের আলমপুর কেন্দ্রের ২৫ বছর বয়সী ভোটার আল আমিন এক প্রতিবেদকের কাছে এমন মন্তব্য করছিলেন। আল আমিন ভোটার স্লিপ ছিড়ে কেন্দ্রের এক কোণে দাঁড়ানো গিয়াস উদ্দিন, এখলাছুর রহমান ও আব্দুল মুমিনকে গিয়ে বলছিলেন, আমি আপনাদের মতই, মনকে বুঝাতে পারি নি, তাই ভোট দেই নি।
ওখানে দাঁড়ানো মধ্য বয়সি ভোটার নূরপুরের গিয়াস উদ্দিন বললেন, ‘ইটা বিএনপি জামায়েতের কেন্দ্র, ইখানো যারা দাঁড়াইয়া আছে, তারা সবাই তামিস্কির (দর্শক)। কেউ কেউ আইছে দেখবার লাগি বা পর্যবেক্ষণ করার লাগি, ইখানো কারে ভোট দিতো মাইনসে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই। যেই লাউ, সেই কদু, এজন্য ভোটে কম আইছে মানুষ।’
গিয়াস উদ্দিন বললেন, একতরফা নির্বাচন হওয়ায় এই নির্বাচন সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় নি। ভোটাররা ভাবছে, আমি ভোট দিলেও প্রার্থী পাশ করবে, না দিলেও পাশ করবে। সেজন্য ভোটারদের কেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভোট দেওয়ার পরিবেশও নাই। জাতীয় পার্টির নেতারা বলেছেন, তারা আসন ভাগাভাগি করেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা এরকম কথা বললে, আমাদের তো আর না বুঝার কিছু থাকে না। যে দলকে ২৬টা আসন সমঝোতার মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাদের তো আর বিরোধী দল বলা যায় না। এরা তো আওয়ামী লীগের অনুগত। কেন্দ্র ৫ হাজার ২৮ ভোট থাকলেও সাত থেকে আট’শ এর বেশি ভোট কাস্ট হবে না। এই ভোটও নৌকার জন্য নয়, একজন ভালো প্রার্থী এখানে থাকায় এই ভোট কাস্ট হবে। নৌকার প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক সাহেব প্রার্থী না হয়ে অন্য কেউ হলে ভোটার আরও কম আসতেন। ভোটারের কাছে ইলেকশন গ্রহণযোগ্যতা পায় নি।’
আলমপুরের এখলাছুর রহমান বললেন, আমি আওয়ামী লীগও না বিএনপিও না। ভালো লাগলে ভোট দেবো। না লাগলে দেব না। এখনো (বেলা একটা) ভোট দেই নি। না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বললেন মানুষে কয়, ‘এক তরফা নির্বাচন ইটা, নৌকায় ভোট দিলেও আওয়ামী লীগ. লাঙল ভোট দিলেও শেখ হাসিনার পক্ষেঔ থাকবো। একই অবস্থা সুনামগঞ্জ ১ ও ২ আসনেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রার্থী দুই জন হলেও গোত্র এক। সেজন্য ভোটার নেই কেন্দ্রে।’
ভোট বর্জনকারীদের পাশে দাঁড়ানো শাহপুরের আব্দুল মুমিন বললেন, ‘আমি খেটে খাওয়া মানুষ। ভোটার হওয়ার পর থেকেই আমরা বিএনপিকে সমর্থন করে আসছি। বিএনপিকে সমর্থন করি বলেই ভোট দিচ্ছি না। বিএনপি নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগের ভোটার আরও বেশি কেন্দ্রে আসতো।
আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫০২৮ ভোটের মধ্যে ১৪৮৪ জন ভোটার ভোট প্রদান করেছেন। এরমধ্যে নৌকা ৯৮৪ এবং লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৫০০ ভোট। এর আগের জাতীয় নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ২৯০০ ভোট কাস্ট হয়েছিল। বিএনপি’র ফজলুল হক আছপিয়া এখানে লাঙ্গল প্রতীকের চেয়ে প্রায় ছয়’শ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
কেবল আলমপুর কেন্দ্র নয়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অনেক কেন্দ্রেই বিএনপি জামায়াতের দুয়েকজন করে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। তাদের কর্মীরা ভোটে আসছে কী না দেখভাল করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল। জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মুনসুর শওকত বললেন, মানুষ ভোট বর্জন করেছে।