সুনামগঞ্জে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ৭:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ভাতা প্রদান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের করা একই শ্রেণির (হাওরাঞ্চলের দুর্গম কেন্দ্র) উপজেলায় একেক ধরণের যাতায়াত ভাতা প্রদান করায় এবং কোন কোন উপজেলায় যাতায়াত ভাতা না দেওয়ায় এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নির্ধারিত যাতায়াত ভাতা না দেওয়া প্রসঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, যাতায়াতের পরিবহনের ব্যবস্থা তারা করায় যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে, রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা প্রশাসক) এই প্রতিবেদককে বলেছেন, দুর্গম এলাকায় ভোট গ্রহণ সামগ্রী পৌঁছাতে কোন কোন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্ধারিত খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে। যাতায়াত ভাতার এই টাকা থেকেই সমন্বয় করে তারা খরচ করেছেন। কমিশনে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা খরচের টাকা দিলে এই টাকা সমন্বয় করা হবে।
জেলা নির্বাচন অফিসের দায়িত্বশীলরা জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলাকে দুর্গম হাওরাঞ্চল বিবেচনা করে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই উপজেলাগুলোর সদর ইউনিয়ন ছাড়া অন্য ইউনিয়নে যাতায়াত ভাতা নির্ধারিত ছিল প্রত্যেক কর্মকর্তার দুই হাজার টাকা করে। কিন্তু তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও দিরাই উপজেলায় যাতায়াত ভাতা পাননি ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা। অন্যান্য উপজেলারও কোন কোন দুর্গম কেন্দ্রের ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাও এক হাজার টাকা পেয়েছেন। এই নিয়ে তিনদিন ধরেই অসন্তোষ চলছে উপজেলায় উপজেলায়। মধ্যনগরের ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা গত বুধবার এই অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে চেয়েছিলেন। পরে থানার ওসি’র আশ্বাসে মানববন্ধন স্থগিত করা হয়। জামালগঞ্জের ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারাও বৃহস্পতিবার এই নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মারুফ আহমদ মান্না জানিয়েছেন, তারা যাতায়াত ভাতা’র এক হাজার টাকা পেয়েছেন। এই টাকা স্বাক্ষর করেই নিয়েছেন। দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রণয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত দুই হাজার টাকাই পেয়েছেন। হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লার সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার দাস জানান, তারাও যাতায়াত ভাতার দুই হাজার টাকা পেয়েছেন। পাশের দিরাই উপজেলার একজন কলেজ শিক্ষক (প্রিজাইডিং অফিসার) জানান, তাদেরকে যাতায়াত ভাতার টাকা দেওয়া হয় নি।
জামালগঞ্জের ঘাগটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সরোয়ার মিয়া জানিয়েছেন, যাতায়াত ভাতার টাকা পান নি তারা। যাতায়াত ভাতার টাকা পাননি তাহিরপুরের ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারাও।
নির্বাচনী দায়িত্বের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে এরকম বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে, একেক ইউএনও একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের চিঠি মোতাবেক সমতল এলাকায় ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাতা এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
জামালগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বললেন, নির্বাচন কমিশন থেকে ভোট গ্রহণ সামগ্রী পৌঁছাতে যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয়েছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। কিন্তু জামালগঞ্জের বিষ্ণুপুর, মাহমুদপুর, আহসানপুর, যতিন্দ্রপুর ও কামলাবাজের মত অনেক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সামগ্রী পৌঁছাতে খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে করা হয়েছে। একারণে যাতায়াতের জন্য ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নগদ টাকা দেওয়া হয়নি। খরচের এই বিল কীভাবে করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, আইন ও বিধি অনুযায়ী বিল করা হবে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খন্দকার বললেন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের বাহন তাঁর অফিস থেকে রিকুইজিশন করে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বাহনগুলোর খরচ মেটানোর পর ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের টাকা দেওয়া হবে। খরচের ভাউচার প্রিজাইডিং অফিসারদের দিয়েই করানো হবে।
মধ্যনগরের ক্ষুব্ধ ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি বলেছেন, যাতায়াতের জন্য তাঁরা দুই হাজার টাকা করে পাবার কথা ছিল। এই টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রয়োজনে অন্য খাতে খরচ করেছেন। কমিশন থেকে পাওয়া গেলে অবশ্যই তারা পাবেন।