বাঘ পালানো মাঘের শীত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ৩:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন
# শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৭
# তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল বন্ধ
স্টাফ রিপোর্টার: ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’ বাংলা সাহিত্যে এমন একটি প্রবাদ বহুল প্রচলিত। এ বছরে মাঘ মাসের শীতল আবহাওয়া যেন প্রবাদটির সত্য রুপ দিয়েছে। সিলেট জুড়ে অব্যাহত রয়েছে হাড় কাঁপানো শীত।
মঙ্গলবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাশ বলেন, মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এর আগে রবি ও সোমবার সূর্যের দেখা মেলেনি, কুয়াশার চাদরে সারা দিন ঢাকা ছিল চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও ঠান্ডা এতটুকু কমেনি।এছাড়া আবহাওয়া অফিস মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
কুয়াশার কারণে উড়োজাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে এবং সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।এদিকে, আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাসে বলেছে।
চলমান ঘন কুয়াশা ও শীতে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহের সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষেরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। শিশু ও বয়স্করা কষ্ট পাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালগুলোতে বেড়ে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।শীত নিবারণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দিকে তাকিয়ে আছে চা শ্রমিকসহ ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। হাড়কাঁপানো শীতে শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীতের সময় সাধারণত নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, অ্যাজমা জাতীয় অসুখগুলো বেড়ে যায়। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। এর বাইরে তীব্র শীতে হার্টঅ্যাটাকের ঘটনাও বাড়ছে। এজন্য যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এদিকে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেকেই এই সময় আগুন পোহায়। অসাবধানতায় সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে শীতের কারণে গোসল না করায় চর্মরোগ বেড়ে যাচ্ছে।‘
তিনি বলেন, ‘শীত বেশি হলে শিশু, বৃদ্ধ এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যাতে করে প্রয়োজন ছাড়া বের না হন, সে বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যদি বের হতেই হয়, তাহলে যেন পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পরে বের হন।
এদিকে, দেশে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।মাউশির সহকারী পরিচালক এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে আঞ্চলিক পরিচালকগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবেন। তাপমাত্রার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কর্যকর থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।