হকারের পেটে সড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ৮:১০:১৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টর: নগরীর প্রায় সবগুলো রাস্তার বড়ো একটা অংশ এখন হকারদের দখলে। আর ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো যেন হকারের পেটে বিলিন হয়ে বাজারে পরিণত হয়েছে। আর ফুটপাত দখল তো পুরনো কাহিনি। ফুটপাত দখলের পর শুরু হয় হকারদের রাস্তায় অবস্থান। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সেই অবস্থান এখন দখলে পরিণত হয়েছে।
আগে বিকেলের পর সন্ধ্যার আগে হকাররা ফুটপাতে বসলেও গত সপ্তাহ দশদিন থেকে সকাল থেকেই বসা শুরু করছেন। দুপুরের পর তাদের অবস্থান ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে এবং একসময় রাস্তা দখলে চলে যায়। বাকি যে অল্প জায়গা অবশিষ্ট থাকে তা চলে যায় গাড়ি পার্কিয়ের দখলে। এরমধ্যে বন্দর থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা দখলে বেহাল। হাকারের বাইরে রাস্তার বাকি অংশ লেগুনা এবং ব্যক্তিগত গাড়ি পাকিং দখল হয়ে যায়। দখলের দিক থেকে বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট এবং আম্বরখানার অবস্থা ভয়াবহ। এসব রাস্তায় দখল এত পরিমাণ ছড়িয়েছে যে গাড়ি চলাচল তো দূরে থাকা লোকজনকে হেঁটে এসব এলাকা অতিক্রম করতে কাঙ্গালি ভোজের শিরনীর মতো লাইন করে চলতে হয়। ফলে রাস্তায় অল্প পরিমাণ অংশ দিয়ে মানুষ ও যানবাহন পালা করে চলতে হচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।
বুধবার সরেজমিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দেখাযায় কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সড়ক দখল হয়ে আছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন ঈদের বাজার। আশপাশের বিল্ডিং থেকে তাকালে এটা কোনো সড়ক নাকি বাজার তাও ঠাওর করা কষ্টসাধ্য। ফুটপাত থেকে রাস্তার অর্ধেক দখল করে হকাররা বিক্রি করছেন শীতের কাপড়। সেই কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকা ক্রেতার চাপে দখল হয়েছে বাকি আরও কিছু অংশ। ক্রেতা হকারের পর বাকি যে অংশ তার কিছুটা সাড়িবদ্ধ লেগুনা এবং কিছু অংশ প্রাইভেট কারের পাকিংয়ের দখলে। লেগুনাগুলো কোর্ট পয়েন্টের কাছে সাড়িবদ্ধভাবে থাকলেও সবুজ বিপনী পার হয়ে বাকি অংশ এলোমেলো প্রাইভেট কার, জিপ ইত্যাদির দখলে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রেখে চলে যেতে দেখা যায়। বিকাল ৪টা চল্লিশ মিনিটের দিকে অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে আইনজীবী স্টিকার লাগানো ঢাকা মেট্রো গ-১৩৬৮৪৯ নম্বরের একটি সাদা প্রাইভেট কার দেখা যায় রাস্তার মাঝখানে রেখে ড্রাইভার নেই। এমনিতেই যানজট তারমধ্যে ড্রাইভারবিহীন এই গাড়ির জন্য তৈরি হয় আরও জটলা। এই সড়কে শীতের কাপড়, জুতা, ছেলেদের আন্ডার গার্মেন্টস এবং রান্নাবান্নার সহযোগী তৈজসপত্র বিক্রির হকারদের সংখ্যা বেশি।
অপরদিকে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বন্দরবাজার থেকে জেলরোড পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অর্ধেকের বেশি সবজিওয়ালাদের দখলে চলে যেতে দেখা গেছে। তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে হে পোস্ট অফিসের সামনের অংশে কয়েক সারিতে রাস্তা দখল করে সবজি বিক্রি করছিলেন। ফুটপাত থেকে রাস্তার অর্ধেক দখলে চলে যাওয়ায় যানবাহন হাসান মার্কেটের গা ঘেষে মাত্র এক সাড়িতে চলাচল করার সুযোগ ছিল।
অবস্থা ভয়াবহ ছিল নগরীর আম্বরখানার। পয়েন্টের আশপাশ সিনএজি অটোরিকশার দখল। বাকি অংশে বিভিন্ন পদের সামগ্রি নিয়ে হকারদের দখলে। মাঝে মাঝে রাস্তার উপর টুল-টবিল বসিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিম বিক্রিও করতে দেখা গেছে বিক্রয় কর্মীদের। সবকিছু মিলিয়ে নগরীর ব্যস্ততম রাস্তায় যেন এক হ য ব র ল অবস্থা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অনেকেই এ নিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন। তারা বলছেন সড়ক কী যানবাহনের নাকি হকারের? সড়ক যদি হকারের হাতেই দিয়ে দিতে হয় তাহলে বাহন চলাচলের জন্য আলাদা কোনো পথ কর্তৃপক্ষ তৈরি করুক।
এ অবস্থায় দুই দিন আগে মেয়র আনোয়রুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, এক মাসের মধ্যে হকারমুক্ত হবে নগরের ফুটপাত। তার এ বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকেই হকারমুক্ত ফুটপাত দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।