হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর ভিড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৫:২৯ অপরাহ্ন
সিলেটে তাপমাত্রা ১০.৫
এমজেএইচ জামিল: মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে সিলেট। ১০ ডিগ্রিতে নেমেছে তাপমাত্রা। শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত সিলেটের জনজীবন। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে। টা-াজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক বেডে ৪ থেকে ৫ জন শিশুকে ভর্তি রেখেদেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল, রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নগরীর বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে শীতজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে। এসব হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারী বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। এদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, হঠাৎ তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় সিলেটে শীত বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ বেড সবসময় রোগীতে পূর্ণ থাকছে। পাশাপাশি স্ক্যানোতে থাকছেন বেশী রোগী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ২ হাজার ৩০০ এর মতো রোগী ভর্তি রয়েছেন। পাশাপাশি আউটডোরে প্রতিদিন ৪ হাজারের বেশী রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে হঠাৎ করে রোগীর মৃত্যুর হারও বাড়ছে। ১৭ জানুয়ারী বুধবার হাসপাতালে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৬ জানুয়ারী মঙ্গলবার মারা যান ২৭ জন। এর আগে ১৫ জানুয়ারী মারা গেছেন ২১ জন এবং ১৪ জানুয়ারী মারা গেছেন ৩১ জন। তবে শীতজনিত কারণে মৃত্যু বাড়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ হাসপাতালে সবধরণের রোগি চিকিৎসা নিতে আসেন। অধিকাংশ রোগী আসেন মুমূর্ষ অবস্থায়। তাই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েও অনেকেই মারা যান। হঠাৎ রোগীর মৃত্যুর কারণ খুঁজতে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে কয়েকটি মনিটরিং টীম গঠন করা হয়েছে। মৃত্যুবরণকারী রোগীদের মৃতের কারণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা: জন্মেজয় দত্ত দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে প্রতিদিন টা-াজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীর সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট জেলায় টা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭জন। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় টা-াজনিতে রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১২২ জন। এরমধ্যে টা-াজনিত রোগে মারা গেছেন ২ জন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেটে হঠাৎ করেই তাপমাত্রা নেমে গেছে। ফলে সিলেটবাসীর মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাপমাত্রা ২৪-২৫ ডিগ্রি থেকে ১১-১২ ডিগ্রিতে নেমে আসায় এর ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছেনা। ফলে সিলেটে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এই সময়ে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ১ বছরের নিচের শিশুদের টা-া লাগানো থেকে বিরত রাখতে হবে। কারণ এই শীতে শিশুরা বেশী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেক হাসপাতালে শিশু রোগীদের বেড মিলছেনা। তাই সর্বোচ্চ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে।
জানা গেছে, মাঘের শুরু থেকে দেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সিলেট জেলায় বয়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিদিনই বাড়ছে শীতের দাপট। আর কমছে তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার সিলেটের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অদিদপ্তর। তীব্র শীতের সাথে সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে সিলেট। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত নগরে সূর্যের দেখা মিলেনি। ১২টার পর নগরীতে দেখা মিলে সূর্যের। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের প্রভাব পড়েছে নগর জীবনেও। বেলা ১১ টা পর্যন্ত নগরে মানুষজনের চলাচল ছিলো সীমিত। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও উপস্থিতি একেবারেই কম। শীতের একেবারে কাবু হয়ে পড়েছেন বস্তিবাসী, নি¤œ আয়ের ভাসমান মানুষেরা। শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত দরিদ্র চা শ্রমিকেরাও। শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়েছে। বিশেষত শিশুরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরআগে বুধবার সিলেটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫০ ডিগ্রি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আব্দুল মুহিত জানান, সিলেটে প্রতিদিনই তাপামাত্রা কমছে। বৃহস্পতিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো। আরও কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত পাঁচদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ১৫ ডিগ্রির উপরে উঠছে না। বৃহস্পতিবার দেশের ৬ টি জেলা বান্দরবান, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ঈশ্বরদী (পাবনা), শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ও সীতাকু- (চট্টগ্রাম) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে।
এদিকে দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা বিভাগ। তবে দেশের ৬টি জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার খবর পাওয়া যায়নি।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হলেও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। এই কয়েকদিন সিলেটের তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমবে। তবে সিলেটের তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ ডিগ্রির নিচে নামার সম্ভাবনা খুব কম। এমন পরিস্থিতি পুরো জানুয়ারি মাস থাকতে পারে।