ভরা শীতেও তুষারহীন কাশ্মীর!
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ৯:০৪:৩৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : ভারত শাসিত কাশ্মীরের মনোরম শহর গুলমার্গে ১৭ বছর ধরে হোটেল চালিয়ে আসছেন মঞ্জুর আহমেদ; দীর্ঘ এই সময়ে তিনি সেখানে তুষারহীন কোনো মৌসুম দেখেননি। কিন্তু এবারের চিত্র বেশ ভিন্ন। সেখানকার তুষার ঢাকা পর্বতগুলো এখন অদ্ভুত রকমের বাদামি আর শুষ্ক। এমন দৃশ্যকে ‘নজিরবিহীন’ বলছেন ৫০ বছর বয়সি মঞ্জুর। জানাচ্ছেন, এই অবস্থায় পর্যটকরা হোটেল বুকিং বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটকের সমাগম হয়। শীতকালে স্কিইং আর দৃষ্টিনন্দন রূপে আপ্লুত হন পর্যটকরা। কিন্তু এবারের ভরা শীতের সময়ে গুলমার্গে তুষারহীন এমন মরুময় চিত্রের কারণে ঐ এলাকার পর্যটন নতজানু হয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারিতে কাশ্মীরে ১ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। কিন্তু এবার সেই সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জিডিপিতে ৭ শতাংশ অবদান পর্যটন শিল্পের। ফলে তুষারহীন শীত মৌসুম এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ভয়ানক প্রভাব ফেলবে। সেইসঙ্গে কৃষি ও পানির সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটাবে।পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলে প্রভাব ফেলছে। চরম আবহাওয়ার সঙ্গে শীত ও গ্রীষ্মের ব্যাপ্তি বাড়ছে। গত ডিসেম্বর ৭৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত ঘাটতি রেকর্ড করেছে জম্মু-কাশ্মীরের আবহাওয়া বিভাগ। জানুয়ারিতে এই ঘাটতি শতভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে এ উপত্যকা। সেখানকার বেশির ভাগ আবহাওয়া স্টেশনই এই শীতে তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড করছে।
চিরচেনা কাশ্মীরে শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে। হোটেল মালিকরা বলছেন, পর্যটকদের অনেকে বুকিং বাতিল করেছেন। স্কিইং আর বরফে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার সুযোগ না থাকায় অনেকে এলাকাটি দেখেই চলে গেছেন। গুলমার্গ হোটেল মালিক ক্লাবের সভাপতি আকিব ছায়া বলেন, ‘৪০ শতাংশেরও বেশি হোটেল বুকিং বাতিল করা হয়েছে। আটকে আছে নতুন বুকিংও।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুষারহীন শীত মৌসুম এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ভয়ানক প্রভাব ফেলবে। সেইসঙ্গে কৃষি ও পানির সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটাবে। তার ভাষ্য, ‘তুষারপাতের সৌন্দর্য আর ক্যাবল কারে চড়তে এসেছিলাম। কিন্তু তুষারহীন গুলমার্গকে দেখে পুরোই হতাশ।’ পর্যটক কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসাতেও। অথচ শীতকালে আসা পর্যটকদের ওপরই জীবিকা নির্ভর করে সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটন ছাড়াও তুষারপাতের অনুপস্থিতি জলবিদ্যুৎ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি উৎপাদনকেও প্রভাবিত করবে। গুলমার্গের পাশেই আরেকটি পর্যটন গন্তব্য লাদাখ, সেখানেও এখন একই চিত্র। পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুক বলেন, ‘এখানকার চাষাবাদ নির্ভর করে হিমবাহ বা তুষারের ওপর। দ্রুত হিমবাহ গলছে। শীতের ভরা মৌসুমে তুষারপাত না হওয়া মানে বসন্তে গিয়ে পানির বড় সংকট তৈরি হবে।’ লেহয়ের আবহাওয়া কেন্দ্রের পরিচালক সোনম লোটাস বলেন, ‘হিমালয় অঞ্চলে এটি সবচেয়ে শুষ্ক মৌসুমগুলোর একটি।’ কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইরফান রশিদ বলেন, ‘খরার মতো একটি পরিস্থিতির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’