শীতার্ত সিলেটে উষ্ণ বিপিএল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২:৩৭:১৯ অপরাহ্ন
এবারও টিকিট কালোবাজারি?
আহবাব মোস্তফা খান :
শীত পড়েছে খুব। বাতাসে এখন হিম হিম স্পর্শ। সন্ধ্যা-সকাল কুয়াশার চাদর মুড়ে দিচ্ছে চারপাশ। হিমেল হাওয়া প্রাণে তুলছে শিহরণ। এই সময় একটু উষ্ণতার খোঁজে যখন মানুষ, তখনই সিলেটে শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের গরম আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)।
বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এই বিপিএল, যেখানে নামীদামি বিদেশি ক্রিকেটাররাও আসেন খেলতে। ধারাভাষ্যকক্ষেও থাকেন ভিনদেশি তারকা। প্রচার-প্রচারণায়ও নির্দিষ্ট একটা মোটিভ নেয় বিপিএল। ঢাকায় দেখা গেছে, রিকশা পেইন্টিংয়ের আদলে করা হয়েছে লোগো, টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে শুরু করে টুর্নামেন্টের অন্য সবকিছুতেও সেই ছোঁয়া। কিন্তু সিলেট এর থেকে একেবারে আলাদা। চোখে পড়ছেনা সিলেটকে তুলে ধরার কোন আয়োজন!
তবে আজ কৃত্রিম আলোর উষ্ণতায় খেলা শুরুর আগে বরাবরের মতো ঠিকই উত্তাপ ছড়িয়েছে ‘টিকিট’। সিলেট পর্বের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে বিক্রির প্রথম দিনেই। গতবারও একইরকম অভিযোগ ছিলো। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সিলেটে বিপিএল মানেই যেন ‘টিকিট কালোবাজারি’।
প্রথম দিনেই না-কি ছিন্নমূল নারীদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে দাঁড় করানো হয়েছে লাইনে। আর তা চেয়ে চেয়ে নিরব দর্শকের মতো দেখছেন বিসিবি সংশ্লিষ্টরা। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বিক্রিকালে এমন অভিযোগ অসংখ্য টিকিট প্রত্যাশীর। একই অবস্থা লাক্কাতুরার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম গেইটেও।
অনেকের অভিযোগ, পুরুষের থেকে অপেক্ষাকৃত কম ভিড় ছিলো নারী লাইনে। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে টিকেট কালোবাজারীরা। ছিন্নমূল নারীদের টাকার বিনিময়ে পাঠানো হয়েছে টিকেটের লাইনে। এমনকি কোন খেলার টিকেট নিতে এসেছেন তাও জানেন না তারা।
এসময় গণকমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌঁড়ে পালান কালোবাজারির মূল হোতারা। এরপর ৪০০ টাকা দামের টিকিট বিক্রি শুরু হলে তা দুপুর ১২ টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তখন অনেককেই ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় সেখানে।
কিছু কিছু দর্শক অভিযোগ করেছেন মানুষের বিপুল আগ্রহের সুযোগ নিচ্ছে কালোবাজারিরা। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা মূল্যের টিকেটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আর এগুলোই বেশী কালোবাজারী হবে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া ইনচার্জ ফরহাদ কোরেশি দৈনিক জালালাবাদকে জানান, টিকিট বিক্রি সরাসরি বিসিবি তত্ত্বাবধান করে। এখানে কিভাবে বিক্রি করছে তারা আমরা জানি না। তবে টিকিট কালোবাজারির কথা যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে কিন্তু হচ্ছেনা। আমরা আশা করি সিলেটের মাঠ প্রথম দিন দর্শকে পূর্ণ থাকবে।
টিকিটের এই হাহাকারের মাঝে বিপিএলে অংশ নেওয়া সবগুলো দলই এখন সিলেটে। হারতে হারতে সিলেটে অবস্থান নিয়েছে সিলেট স্টাইকার্সও। এরমাঝে স্বাগতিক দল হিসেবে আজই খেলতে নামবে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তবে এই সিলেট দলের সামর্থ্য নিয়ে আছে শত প্রশ্ন।
যদিও বিপিএল শুরুর আগে সিলেট স্ট্রাইকার্স আয়োজন করে বোলার হান্ট প্রতিযোগীতা। বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ১৪০০ ক্রিকেটার রেজিস্ট্রেশন করেন এই প্রতিযোগিতায়। এতে প্রায় ৯শ’ ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করে। তবে টানা দুই হার নিয়ে মাঠের পারফরমেন্সে ব্যতিক্রম যেন সিলেট! প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কাছে ৭ উইকেটে হার, আর দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের রংপুরের কাছে ৪ উইকেটের পরাজয়। এ অবস্থায় আজ চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার সামনে সিলেট।
চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লায় দেশী লিটন দাস ছাড়াও আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, সুনীল নারাইন, মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, জনসন চার্লস, নাসিম শাহ, রশিদ খানসহ একঝাঁক বিদেশী তারকা।
অন্যদিকে, মাশরাফির সিলেটে আছেন রায়ান বার্ল, বেন কাটিং, হ্যারি টেক্টর, রিচার্ড এনগারাভা, দুশান হেমন্ত ও বেনি হাওয়েল। তবে কুমিল্লার বিদেশী খেলোয়াড়দের তুলনায় সিলেট অনেকটাই যে পিছিয়ে-তা বলা যায় অবলিলায়।
বারবার মালিকানা বদলে এখনো থিতু হতে পারেনি ‘ধনী’ সিলেট। থিতু হতে পারেনি মাঠের পারফরম্যান্সও। তাতে বারবার হৃদয় ভেঙেছে সিলেটের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর। ঘরের মাঠে বিপিএল আয়োজন করে তবুও পথচলা একেবারেই বিবর্ণ। তাই এবারও এমপি মাশরাফির হাতেই তুলে দেয়া হলো সিলেট দলটাকে। যিনি বাংলাদেশের হয়ে কত শত জয়ের ফুল ফুটিয়েছেন। কত পরাজয়কে বিজয়ের মালায় গেঁথেছেন। সেই তিনিও সিলেটের হয়ে একেবারেই বিবর্ণ এবার।
মাশরাফির বয়স ৪০ এর কোটায়। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থেকেও বিপিএল খেলা নিয়ে বিতর্কে মাশরাফি বিন মর্তুজা। টি-স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপে মাশরাফির বিপিএল খেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। এই নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যদিও এই নিয়ে ভাবতে রাজি নয় তার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স।
তবে আশরাফুলের কথার বিপক্ষে গিয়ে মাশরাফিকেই সমর্থন দিলেন সিলেটের লোকাল বয় তানজিম হাসান সাকিব। ঘরের মাঠে মাঠে নামার আগে মাশরাফিকে সমর্থন জানিয়ে তরুণ এই পেসার গতকাল বৃৃহস্পতিবার বললেন, মাশরাফি ভাই যোদ্ধা এবং উনি নেতা। তিনি দলে থাকাটাই আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অনুপ্রেরণা।
ফিটনেস পক্ষে না থাকলেও মালিকপক্ষের আগ্রহেই না-কি মাশরাফি খেলছেন মাঠে। এ ইংগিত তিনি দিয়েছেন দ্বিতীয় ম্যাচ শেষের প্রেস কনফারেন্সে। তবে সিলেটের অগণিত দর্শক হয়তো মাশরাফির ফিটনেস খুঁজবেন না আজ, তারা চাইবেন ঘরের মাঠে সিলেটের জয়। এখন দেখার পালা সিলেটবাসীর চাওয়ার পূর্ণতা পায়, না মালিকপক্ষের!
তবে জয় বা হার যা-ই হউক, আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সিলেটের ম্যাচ গ্যালারি সিলেটের জার্সির রঙে গোলাপি হয়ে উঠবে। কারণ মাঠের লড়াইয়ের আগে সিলেটে চলছে টিকিটের প্রতিযোগিতা, যা অন্য ভেন্যুগুলোতে দেখা যায়নি এমন।
আজ বেলা ২টায় খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রাইডার্স ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিপিএলের সিলেট পর্ব। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স।