মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা হাতছাড়া হলো ৪৩ শতাংশ এলাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ৭:৫৬:৩১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: মিয়ানমারে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সম্মিলিত আক্রমণে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী পিছু হটছে। চলতি বছরের প্রথম মাসেও সেনাবাহিনীকে কোণঠাসা করা অব্যাহত আছে। থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি (আইএসপি) মিয়ানমারের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা বাহিনী এরই মধ্যে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে ৪৩ শতাংশেরও বেশি জায়গা হারিয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিয়ানমারে জান্তা বনাম বিদ্রোহীদের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র।থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত ৩৩টি অঞ্চলের দখল হারিয়েছে। এর মধ্যে চিন, সাকাই, কিয়াং প্রদেশ এবং উত্তরাঞ্চলের শান এবং শিন রাজ্য উল্লেখযোগ্য। এসব এলাকা এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্যরা।
অক্টোবরে হামলা শুরুর পর থেকে হাজার হাজার সৈন্য তাদের সরঞ্জাম নিয়ে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সারা দেশে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৪০০রও বেশি সীমান্ত চৌকি হারিয়েছে। এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক কার্যক্রম চালানোর অফিসও রয়েছে।এদিকে, রাস্তায় অতর্কিত হামলা থামাতে ব্যর্থ সামরিক বাহিনী তাদের সীমিত সংখ্যক হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করে ঘাঁটিগুলোতে রসদ পাঠাচ্ছে। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
এই মাসে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার এবং একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাচিন রাজ্যের বিদ্রোহীরা।২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের জেনারেলরা। শুরুতে জান্তার বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভে নামে ছাত্র-জনতা, কিন্তু বন্দুকের নলে তাদের স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়। এরপর মিয়ানমারের তরুণরা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আগে থেকেই মিয়ানমারের কয়েকটি রাজ্যে জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক অভিযানে বেশ গতি আসে। তবু ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালের মাঝ পর্যন্ত ভারী অস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারে সজ্জিত জান্তা বাহিনীকে মোকাবিলা করা সহজ হচ্ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ দিকে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত তিনটি বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী গড়ে তোলে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। তারা অক্টোবরের ২৭ তারিখ থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাগুলোতে শুরু করে জান্তা বিরোধী বিশেষ ‘অপারেশন ১০২৭’। সম্মিলিত এই অভিযানে টলে উঠেছে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের মসনদ।
সীমান্ত অঞ্চলগুলো প্রবল আক্রমণে মিয়ানমার জান্তার হাতছাড়া হতে শুরু করে। গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট মিন্ত সোয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, দেশটির শান রাজ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুরো দেশই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিদ্রোহীদের উত্তর শান রাজ্যের বিশাল এলাকা দখলের কথা উল্লেখ করে একথা বলেন তিনি।
বিদ্রোহীদের তোপের মুখে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর শত শত সদস্য ভারতে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছে। যুদ্ধ না করেই হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।
এ সপ্তাহেও নতুন করে ২৭৮ জন মিয়ানমারের সেনা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে গেছেন। নভেম্বর থেকে দফায় দফায় প্রায় ৬০০’র বেশি সেনা সদস্য এভাবেই মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অনেককে ফেরতও পাঠানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার মূলত জেনারেলদের দখলেই। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের লড়াই বেশ পুরনো। তবে ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে মিয়ানমারের জান্তা সেনাদের এমন পরিস্থিতি নজিরবিহীন। সেনা সদস্যদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। সেনাদের হাল ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখতে মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবনের মতো কঠোর শাস্তি দিচ্ছে জান্তা সরকার।