মুনাফা কমেছে বিমানের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:৪০:৪৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ৩১ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ২২ লাখ। সে হিসাবে নয় লাখ বেশি যাত্রী পরিবহন করলেও এর প্রতিফলন নেই বিমানের নিট মুনাফায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে ৪৩৭ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল, সেখানে গত অর্থবছরে সংস্থাটি লাভ করতে পেরেছে কেবল ২৮ কোটি টাকা। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমনকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিচালন বাবদ গত অর্থবছরে বিমানের মোট লাভ ছিল ১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে সংস্থাটির ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে মুনাফা নেমে এসেছে ২৮ কোটি টাকায়।
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে বিমানের মুনাফা হ্রাসের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিমানের প্রায় ১৮টি স্টেশন আছে, যেখান থেকে টিকিট বিক্রি হয়। সেগুলো বিক্রি হয় সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় মুদ্রায়। পরে এসব অর্থ জমা হয় ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) ক্লিয়ারিং হাউজে। সেখান থেকে রেমিট হয়ে বাংলাদেশে আসে। দেখা গেল ৮০ টাকা ধরে আমরা যে টিকিট বিক্রি করেছি, সে টিকিটের টাকা যখন বাংলাদেশে পৌঁছায় তখন ডলারের দাম হয়ে গেছে ১০০ টাকার ওপরে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সমন্বয়ের পর লাভের বদলে টিকিট বিক্রিতে উল্টো আমাদের লোকসান হয়ে যায়।’
বিমানের ১৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থাপিত লাভ-ক্ষতি বিবরণীতে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিমানের পরিচালন খাতে লাভ হয় ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। অপরিচালন খাত থেকে লাভ হয় আরো ১৩২ কোটি টাকা। এ টাকা থেকে সুদ বাবদ ব্যয়, আয়করসহ আনুষঙ্গিক খাতগুলো বাদ দিয়ে পরিচালন ও অপরিচালন খাত থেকে নিট মুনাফা হয় ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর এ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কারণে ক্ষতি হয় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর বিমানের নিট মুনাফা হয়েছে ২৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
নিট মুনাফা কমে যাওয়ার বিষয়টিকে ‘অপ্রত্যাশিত’ হিসেবে দেখছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম। তিনি বলেন, ‘রেকর্ড পরিমাণ অপারেশনাল প্রফিট করলেও অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের লাভ হয়েছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা।’
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কারণে আয় কম হলেও কোম্পানি হিসেবে গত অর্থবছর বিমান সব সূচকেই উন্নতি করেছে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির সিইও বলেন, ‘আমাদের গত বছর রেকর্ড ক্যাশ ফ্লো হয়েছে, যা ২৩-২৪ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের সব কিস্তি শোধ করেছি। এটা আমাদের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাচ্ছে। ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে একটা ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ কিনেছি। ৭০০ নতুন লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনকে। কভিডকালীন বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আমরা পুনরায় চালু করেছি। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে এ সময়ে ৭০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এটা বড় ধরনের বিনিয়োগ, যার সুফল আমরা সামনে পাব। এসব খাতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করার পরও আমরা লাভে আছি। একটা কোম্পানির যতগুলো সূচক থাকে, সব সূচকেই আমরা ভালো করেছি।’
আয়-ব্যয় বিবরণীতে লাভ দেখালেও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে বিমানের রয়েছে বিপুল পরিমাণ দেনা। এর মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেবিচকে বিমানের দেনা ছিল ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। আর গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিমানের কাছে পদ্মা অয়েলের পাওনা ছিল ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।
দুই সংস্থার কাছে বিপুল পরিমাণ দেনা রেখে বার্ষিক হিসাবে বিমানের লাভ দেখানোকে যৌক্তিক মনে করেন না এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিমান চলতি বছরের হিসাব দেয়। যেসব বকেয়া আছে, সেটা হিসাবে ধরে না। যখন লাভ-ক্ষতির বিষয় আসে, তখন বকেয়াও কিন্তু আমলে নিতে হবে। গত অর্থবছর বিমান যদি সত্যি সত্যি ২৮ কোটি টাকা লাভ করে থাকে, তা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার এবং আমরা অবশ্যই তাদের সাধুবাদ জানাব। কিন্তু কোন সংস্থা বিমানের কাছে কত টাকা পাবে তার জবাবও দিতে হবে।’
অন্যদিকে নিয়মিতভাবে টাকা পরিশোধ করে বকেয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনার দাবি করছেন বিমানের সিইও শফিউল আজিম। তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছর আমরা অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ সিভিল এভিয়েশনকে ৫০৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। এটা চলতি হিসাব। আর পুরনো দেনা হিসেবে আমরা তাদের দিয়েছি ১৫০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে পদ্মার বিল ছিল ১ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমরা তাদের পেমেন্ট করেছি ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। পুরনো বকেয়ার মধ্যে ১১০ কোটি টাকা শোধ করেছি।’
পুরনো যে বকেয়া আছে, সেগুলো নিজের আমলে হয়নি উল্লেখ করে শফিউল আজিম বলেন, ‘এসব বকেয়া কোম্পানি হওয়ার আগে থেকেই ছিল। মূল বকেয়ার পরিমাণ কিন্তু অনেক কম। সারচার্জ, সুদ ইত্যাদি মিলে টাকার অংকটা বেড়ে গেছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি পর্যায়ক্রমে দেনার পরিমাণ কমিয়ে আনতে। একই সঙ্গে বকেয়া সেটলমেন্টের চেষ্টাও করে যাচ্ছি আমরা।’