বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্বের সমাপ্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:০৭:৩৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে রোববার শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। সকাল ৯টা ১ মিনিটে মোনাজাত শুরু করেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি, কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
এরআগে, ফজর নামাজের পর হেদায়াতি বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় এবারের ইজতেমার প্রথমপর্বের শেষদিনের কার্যক্রম। এ সময় বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর কিছু সময়, নসিহতমূলক কথা বলেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
এ পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্বে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে শনিবার রাত থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে জড়ো হন। তারা ময়দানের আশপাশের এলাকা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া সড়ক, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এতে ওই সব এলাকায় স্বাভাবিক চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্বের আখেরি মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনা করা হয়েছে। এ পর্বে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত করেন তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে হাত তুলেন লাখ লাখ মুসল্লি। আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুণাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বিপদ-মুসিবত থেকে মানবজাতিকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।
রোববার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ৯টা ২৩ মিনিটে শেষ হয় আখেরি মোনাজাত। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে তুরাগ তীর। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা।
গাজীপুর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার রাত ১১টার পর থেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুর-ভোগড়া বাইপাস ও কামারপাড়া-মীরেরবাজার এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি ডাইভারশন করা হয়েছে। এসব গাড়ি ইজতেমাস্থলে প্রবেশ করেনি। শুধু ইজতেমার মুসল্লিবাহী বাস ও গণপরিবহন চলাচল করেছে।
রোববার তুরাগ তীরে মোনাজাত শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ মানুষ যে যেখানে ছিলেন, তারা দুহাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। ইজতেমা মাঠ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থানকারীরাও হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। ইজতেমাগামী সাধারণ মুসল্লি যারা তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে রওয়ানা হয়েছিলেন কিন্তু মোনাজাত শুরুর পর তারা সেখান থেকেই মোনাজাতে অংশ নেন। হাঁটতে হাঁটতেই দুহাত তুলে ইজতেমায় যেতে থাকেন।
শুক্রবার ফজর নামাজের পর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এবার ৫৭তম ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ সময় আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা। এরপর রোববার শেষদিন ফজর নামাজের হেদায়াতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর কিছু সময় নসিহতমূলক কথা বলেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। সবশেষে ৯টায় শুরু হয়ে ৯টা ২৩ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় আখেরি মোনাজাত। এ মোনাজাত করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা জোবায়ের।
মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন : ইজতেমায় যাওয়া মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্তে ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা এবং টঙ্গী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য ১১ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রথমপর্বে ১৫ জনের মৃত্যু : শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ইজতেমা ময়দানে ৯ জন, ময়দানে আসার পথে একজন পুলিশ সদস্যসহ ৬জন নিয়ে ১৫ জন মারা গেলেন।
বিদেশি মেহমান : শনিবার বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৯টি দেশের ৩ হাজার ২২৩ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে অবস্থান করেন। মাঠের এক পাশে কামারপাড়া সেতুসংলগ্ন একটি বিশাল তাঁবুতে রাখা হয় তাদের। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সিসি ক্যামেরায় বিদেশিদের প্রতিটি খিত্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
যৌতুকবিহীন বিয়ে : বিশ্ব ইজতেমায় যৌতুকবিহীন ৭২ জোড়া বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এই সংবাদ নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুল্লাহ রায়হান। তিনি বলেন, শনিবার বাদ আসর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মূলমঞ্চে ৭২ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান।
গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবাদানে ইজতেমা ময়দানের অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় সেবাকার্যে যতটা সম্ভব সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। রোববার আখেরি মোনাজাত শেষে এ পর্বে আগত মুসল্লিরা ময়দান ত্যাগ করবেন।
পরে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের অনুসারী মুসল্লিরা ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজন করবেন। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে।