৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ এমসি কলেজ অধ্যক্ষ : নেপথ্যে কি?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:২৯:১৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হঠাৎ করেই উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দাবীতে দিনভর নিজ কার্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ। দফায় দফায় বৈঠক করে এবং দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন অধ্যক্ষ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজের ইতিহাস বিভাগের চারজন শিক্ষক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও গত ৩১ জুলাই থেকে পদগুলো শূন্য আছে। শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, শিক্ষক না থাকায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি কলেজের একটি বিভাগে ছয় মাস ধরে একজন শিক্ষকও কর্মরত নেই, এটা দুঃখজনক।
অন্যদিকে কলেজের ছাত্রাবাসে পানির সংকট রয়েছে। সেটি দূর করতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ছাত্রাবাসে পানির সংকট চলছে। বারবার অধ্যক্ষকে জানানোর পরও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আমরা পানি সংকট নিরসনে টিউবওয়েল বসিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। অধ্যক্ষ বলেছেন টাকা নেই। একটা টিউবওয়েল বসানোর টাকা কলেজের ফান্ডে নেই, এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। তাই আন্দোলনে নেমেছি এবং অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেছি আমরা। পানির সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
জানা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটার থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে এমসি ক্যাম্পাস। অধ্যক্ষ দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলামের মধ্যস্ততায় শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রাত সাড়ে আটটার দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রুহেল আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন রাহীসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠক শেষে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহবান জানান অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজ।
এ ব্যাপারে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ছাত্রাবাসে পানি সঙ্কট ও ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সমস্যা সমাধানে দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসি। তারা ছাত্রাবাসে পানি সংকট ও ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানালে সময় চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের দাবি আজকের মধ্যে পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ এখন আমাদের কাছে নেই জানালে, তারা আন্দোলন শুরু করে। বিকালে অফিস কক্ষের বাইরে তালা দিয়ে আমাকে ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টির সমাধান হয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, কলেজ তহবিল থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না, আর শিক্ষক নিয়োগের বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় দেখে। তাঁর পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ কথা শোনার পর শিক্ষার্থীরা বের হয়ে গিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরেছেন। এর পর থেকে তিনিসহ সাত-আটজন শিক্ষক ভেতরে রয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি তাৎক্ষনিক একটি পানির লাইন বৃদ্ধির দাবী মেনে নিয়েছি আর শিক্ষক নিয়োগের এখতিয়ার আমাদের হাতে নেই। আমরা নিয়ম মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছি। এরপরও শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলনের সময় দীর্ঘায়িত করছে সেটা তারাই জানে।
এদিকে দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে এই আন্দোলন হলেও এর নেপথ্যে অন্যকিছুর আভাস দিচ্ছে কলেজ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। একটি ছাত্র সংগঠনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ছাত্র সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যায্য দাবী মেনে না নেয়ার কারণেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই ‘অ্যাকশন’ নেয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
একাধিক শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সঙ্কটের জন্য সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন হলেও নেপথ্যে রয়েছে কলেজ ছাত্রলীগ। এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক সভাপতি প্রার্থীর নেতৃত্বে এই আন্দোলন চলছে। তারা আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর পরিবর্তে সংসদ সদস্য এডভোকেট রনজিৎ সরকারকে প্রধান অতিথি করতে চায়। অধ্যক্ষকে চাপে রাখতেই এই আন্দোলন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, অধ্যক্ষ পানি সমস্যা সমাধানে টিউবওয়েল বসাতে রাজী হয়েছেন। কিন্তু একদিনে টিউবওয়েল বসানোর দাবী অযৌক্তিক। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে অধক্ষের তেমন কোন এখতিয়ার নেই। এটাও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। সুতরাং এরপরও রাত ৯টা পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখা প্রমাণ করে নেপথ্যে পানি কিংবা শিক্ষক সংকট নয়, এটা অন্যকিছু।
এসএমপির শাহপরান থানার ওসি হারুনুর রশীদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা দিনভর আন্দোলন করে। তারা ৪ ঘন্টা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাত ৮টার দিকে আমি কলেজ গেইটে ছিলাম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে অধ্যক্ষের বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হয়েছে।