টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা লাগতে পারে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:৫৮:৫৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : সম্প্রতি কয়েকশ বছরের পুরোনো টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের দাবি করে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তারপর বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
নিজেদের দাবি করে স্বীকৃতি দিলেও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় দাবি নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনে ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনে যাওয়ার কথা বলছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
জানুয়ারির শুরুতে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই পণ্য হিসেবে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ স্বীকৃতি দেয়। তারপর ১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের জিআই পণ্য উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হলে দুদিনের মধ্যে পোস্ট সরিয়ে নেয় ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
আলোচনায় আসে বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গও। টাঙ্গাইলে এ নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়। দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে ভারতের নিজস্ব পণ্য দাবি করে ভৌগোলিক নিদর্শক পণ্যের স্বত্ব নেওয়ায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সেইসঙ্গে দ্রুত ভারতের জিআই স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের তালিকায় টাঙ্গাইল শাড়িকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ওঠে।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির জিআই স্বত্ব পেতে আবেদন করে জেলা প্রশাসন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ আবেদন করেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম। আবেদনটি পাওয়ার পর ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে জার্নাল প্রকাশ করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
টাঙ্গাইল এলাকা বাংলাদেশের অংশ, তাই এ এলাকায় উৎপাদিত শাড়ির ওপর বাংলাদেশের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। টাঙ্গাইল শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) না পেলে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সেজন্য বাংলাদেশকে দাবি নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতায় যেতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান বেনার নিউজকে বলেন, ভারত টাঙ্গাইলের শাড়ির গেজেট করেছে, আমরাও করেছি। আমাদের অধিকার স্বীকৃত। তাই দুই দেশের সরকার পর্যায়ে দর কষাকষির মাধ্যমে সমঝোতায় যেতে হবে। সেটি না হলে আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতা ছাড়া এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি হয় না।
বিরোধ নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা একই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যদি বিরোধ বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।